আশুলিয়া প্রতিনিধিঃ দুগ্ধ গরুর পাশাপাশি প্রতি বছরের ন্যায় এছরেও কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে আশুলিয়ার “আয়শা এগ্রো ফার্মের” ১৫টি গরু ও ৩টি মহিষ। এরমধ্যে ফিজিয়ান জাতের নয়ারাজ নামের গরুটি অন্যতম। কোরবানির হাট কাপানোর পাশাপাশি এটি সারা দেশের সেরা গরু হিসেবে বিবেচিত হতে পারে বলে এমনটাই আশাবাদ ব্যাক্ত করেন খামারের স্বত্বাধিকারী আবুল হুসাইন। মঙ্গলবার সকালে আশুলিয়ার দক্ষিণ গাজিরচট এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে খামারে এমন বিশালাকৃতি গরুটির দেখা মেলে।
জানা যায়, ব্যবসায়ী উদ্দেশ্যে নয় শখের বসেই এই খামারটি গড়ে তুলেন খামারের মালিক আবুল হুসাইন। দুগ্ধ গরুর পাশাপাশি ২০০১ সাল থেকে এই খাইমারে কোরবানির জন্য প্রস্তুুত করেন বড় বড় আকৃতির গরু। শুরু লগ্ন থেকে প্রস্তুতকৃত বড় গরুটির নাম দেওয়া হয়েছিল নয়ারাজ-১। সেই থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো গরু প্রস্তুত করা হয়েছিলো ওইসব গরুগুলোর মধ্যে বড় গরুটির নাম রাখা হয়েছিলো নয়রাজ।
এরই ধারাবাহিকতায় এবছরেও কোরবানির জন্য প্রস্তুতকৃত ১৫টি গরু ও ৩টি মহিষের মধ্যে ফিজিয়ান জাতের গরুটি বিশালাকৃতির। যার নাম রাখা হয় নয়ারাজ-২৪। আলাদাভাবে এই গরুগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়োজিত রয়েছে বেশ কয়েকজন রাখাল। নয়ারাজ স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি প্রতিদিন দুধ পান করে ১০লিটার। এছাড়া মিষ্টি কুমড়া, নরম ভাত, ভুট্টা ও ঘাসসহ প্রাকৃতিক খাবারও খাওয়ানো হয়ে থাকে। ৪ বছর ধরে কোরবানির পশু হিসাবে এটি লালন করা হচ্ছে। গতবছর নয়ারাজ-২৩ নামের আরও একটি গরু প্রস্তুত করা হয়েছিল। সেটি গাবতলি বাজারের সেরা গরু হয়েছিল। তবে এবারে নয়ারাজ-২৪ নয়ারাজ-২৩ এর চেয়েও বিশালদেহী। এ গরুটিও বাজার তথা দেশের সেরা গরু হতে পারে। নয়ারাজ এর আনুমানিক দৈর্ঘ্য ১২ ফুট ও ওজন ৩৭ মন। তবে কোরবানির গরু হওয়ায় কোন ধরনের পরিমাপ করতে রাজি নয় খামারের মালিক।
নয়ারাজ দেখভালে নিয়োজিত মোঃ জামাল মিয়া বলেন, ছোট থেকেই নয়ারাজকে আমি দেখাশোনা করে আসছি। কোরবানীর জন্য প্রস্তুত করায় স্বাভাবিক খাবার খাওয়ানো হয়েছে। তবে জন্মের পর থেকে দুধ খাওয়া শুরু করে আজও দুধ খেয়ে যাচ্ছে গরুটি। অপর এক রাখাল বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এই খামারে কাজ করে আসছি। এখান থেকে যে পারিশ্রমিক পাই তা দিয়ে আমার সংসার ভালোভাবে চলে যাচ্ছে। এই খামার থেকে অনেকের বেকারত্ব কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে।
খামারের স্বত্তাধীকারী আবুল হুসাইন বলেন, আমি ছোট বেলায় দেখতাম আমার বাবা বড় বড় গরু পালন করতেন। সেই অনুপ্রেরণা থেকেই আমি বড় গরু পালন করছি। এবার আমি ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১৫ টি গরু, ৩টি মহিষ প্রস্তুত করেছি। সবগুলো গরু আমার খামারে জন্ম নেওয়ার পর বছাই করেছি। প্রায় ৪ বছর পালন করেছি এসব কোরবানির পশু। তবে এবারের নয়ারাজ গরুটি সেরা গরু হতে পারে। গরুটির দাম উঠেছে ১৪ লাখে। কিন্তু আমরা বিক্রি করি নাই। গো-খাদ্য ও ওষুধের যে দাম বেড়ে গেছে তাতে গরু পালনের খরচও অনেক বেড়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবে শুধু কোরবানীর জন্য গরু প্রস্তত করা এখন কষ্টদায়ক। আমার খামারে ১৫০টি গরু রয়েছে। বেশিরভাগ গরুই দুধ দেয়। দুধ বিক্রির টাকা দিয়ে আমি কোরবানির জন্য গরু প্রস্তুত করি। বর্তমানে গরু পালন করে খরচ পোষে না। তবে চার বছর ধরে যা খরচ হয়েছে তা হয়তো একবারে হাতে পাবো।
এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাজেদুল ইসলাম বলেন, সাভার আশুলিয়ায় প্রায় ১০ হাজার পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। গরু মহিষ ছাগল ভেড়া সব মিলে প্রস্তুতকৃত পশুর এই সংখ্যা। যা সাভারের জন্য পর্যাপ্ত। এছাড়া বিভিন্ন গরুর হাঁটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিক্রির জন্য গরু আনা হয়। যা দিয়ে সাভারে চাহিদা পর্যাপ্ত পূরণ হয়। আমরা মুলত পরামর্শটাই বেশি দিয়ে থাকি, আগে থেকেই কৃমিনাশক, ভ্যাকসিনগুলো যেনো দিয়ে দেন। আমরা খামারিদের ওষুধের ওপর নির্ভরশীল হতে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকি। কোরবানির পশু প্রাকৃতিক উপায়ে পালন করার পরামর্শ আমরা দিয়ে থাকি।