আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধিঃ আশুলিয়ায় চিহ্নিত মাদক কারবারি, জমি দখল, ঝুট ব্যবসা দখল, চাঁদাবাজি ও চোরাকারবারিসহ একাধিক মামলার আসামী যুবলীগ নেতা লিটন মাদবরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক চৌকশ টিম আশুলিয়া ও গাজিপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। পরে পাঁচ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত লিটন মাদবর আশুলিয়ার আড়াগাঁও এলাকার হাজী আঃ রহমানের ছেলে। তার বিরুদ্ধে নিরীহ মানুষকে ভয়ভিতি দেখিয়ে প্রান নাশের হুমকি দিয়ে জমি দখল, কারখানা দখল, ঝুট ব্যবসা দখল, ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসা দখলসহ বিভিন্ন অবৈধ কাজ করার অভিযোগ রযেছে। এসব কাজের মাধ্যমে অল্পদিনেই গাড়ি বাড়ির মালিক বনে গেছেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করাসহ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেয়া সাধারন শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবি মানুষকে হুমকি প্রদান ও মারধরের অভিযোগ রয়েছে।
এসব কাজ হাসিলের জন্য লিটন মাদবরের একটি বিশাল বাহিনী রয়েছে। যারা লিটন মাদবরের হয়ে বিভিন্ন মানুষকে মারধর ও হুমকি ধামকি দিয়ে থাকে। এই বাহিনীর অন্যতম সদস্যরা হলেন, আশুলিয়ার আড়াগাঁও এলাকার এলাকার মহিবুল ইসলামের ছেলে যুবলীগ নেতা রাহি মাদবর, মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে মোঃ সোহাগ মিয়া, আদম আলীর ছেলে মোঃ ইনসান আলী ও মাসুম, রফিক তালুকদারের ছেলে সাদ্দাম তালুকদার।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যুবলীগ নেতা লিটন মাদবর আগে আওয়ামী লীগ সমর্থিক সাবেক এমপি ডাঃ এনামের অনুসারী থাকলেও গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ডাঃ এনামকে পল্টি দিয়ে সতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী সাইফুল ইসলামের নির্বাচন করেন। নির্বাচনে সাইফুল ইসলাম এমপি হওয়ার পর লিটন মাদবর এলাকায় আগের চেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন। দিনে দুপুরে অন্যের জমি দখল, কারখানা ও ঝুট ব্যবসা দখল, চাঁদাবাজি, অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদান, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রনসহ সব ধরনের অপকর্মের মদদদাতা হিসেবে এলাকায় আধিপত্ত্য বিস্তারের জন্য গড়ে তুলে ক্যাডার বাহিনী। এই বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে মানুষকে ভয়ভিতি দেখিয়ে নিজের কাজ হাসিল করতেন তিনি। তার ভয়ে এলাকার ব্যবসায়ী ও কারখানা মালিকরা কোন কথা বলতে পারতেননা। যদিও কেউ তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন কিংবা সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামের সরনাপন্ন হতে তাতেও কোন লাভ হতোনা উল্টো ভুক্তভোগীদের উপর জুলুম নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পেতো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীরা বলেন, লিটন মাদবরের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাকে ধরে নিয়ে মারধর করা হয় এমনকি অনেককে এলাকাছাড়া হতে হয়েছে। তার অত্যাচারের মাত্রা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এলাকার সব ধরনের দখল, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসার নের্তৃত্ব দেয় লিটন মাদবর। তাকে কমিশন না দিয়ে এলাকায় কেউ ব্যবসা করতে পারেনা।
লিটন মাদবর আড়াগাঁও, বেলমা, বাসাইদ এলাকায় অবস্থিত বাটন ফ্যাক্টরি, নিট প্লাস লিমিটেড, রাতুল নিট লিমিটেডসহ সকল কারখানার ঝুট ও পুরাতন মালের ব্যবসার পাশাপাশি মাসিক চাঁদা আদায় করতো। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে তার মালামাল পরিবহনের গাড়ি আটকে দিয়ে হুমকি দিতো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাতুল নিট লিমিটেড কারখানার এক কর্মকর্তা বলেন, যুবলীগ নেতা লিটন মাদবরের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমরা কিছুই বলতে পারতামনা। সে যখন যা খুশি তাই করতো। তার বিরুদ্ধে আইগত ব্যবস্থা নিতে গিয়ে উল্টো আমরা বিপাকে পড়েছিলাম। এখন বাধ্য হয়ে সে যেভাবে বলে আমাদের সেভাবেই ব্যবসা পরিচালনা করতে হয়।
অন্যদিকে ক্ষমতা এবং টাকার জোরে আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ড থেকে মেম্বার নির্বাচনও করেছেন যুবলীগ নেত লিটন মাদবর। তখন তার কথামতো নির্বাচন থেকে সড়ে গিয়ে তাকে সাপোর্ট না করায় প্রতিপক্ষ আব্দুল খালেক মেম্বারকে হত্যার চেষ্টাসহ তার লোকজনের উপর হামলা চালিয়ে মারধর করে লিটনের অনুসারীরা। এঘটনায় ভুক্তভোগী আব্দুল খালেক বাদী হয়ে একটি মামলাও দায়ের করেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন দুপুর ১২ টার দিকে আশুলিয়া ইউনিয়নের আড়াগাও এলাকায় ভোটকেন্দ্র আড়াগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে খালেকের প্রতিপক্ষ মোরগ প্রতিকে নির্বাচনে অংশ নেয়া লিটন মাদবরের পক্ষে কেন্দ্রে ঢুকে জোর করে জাল ভোট দেন রাসেল মাদবর ও তার সহযোগীরা। একাজে বাঁধা প্রদান করলে ফুটবল মার্কাপ্রাপ্ত আব্দুল খালেকের সমর্থকদের হুমকি দেয় তারা। পরে কেন্দ্র থেকে বের হলে তাদের উপর স্বসস্ত্র হামলা চালিয়ে মারধর করে যুবলীগ নেতা রাসেল মাদবর ও তার সহযোগীরা। এ সময় গুরুতর আহত হন ইউপি সদস্য প্রার্থী আব্দুল খালেকের এজেন্ট মোঃ হালিম, ভাগিনা শামসুল আলম, ভাতিজা জাহাঙ্গীর আলম। এছাড়া হামলার শিকার হওয়া বাকি এজেন্টরা হলেন, জাহের, সেলিম, রকি ও শিপন। অভিযুক্তরা রামদা, লোহার রড, চাপাতি, জিআই পাইপ, লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত ছিল। সংবাদ পেয়ে আব্দুল খালেক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তাকেও হুমকি প্রদান করে অভিযুক্তরা চলে যায়।
লিটন মাদবরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে ধারাবাহিকভাবে তার সকল অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরা হবে।