সাভার প্রতিনিধিঃ সাভারে স্বামীকে ঘুমের ঔষুধ খাইয়ে অচেতন করে প্রায় দেড় বছর ধরে পরকিয়া সম্পর্ক চালিয়ে আসছিলো এক গৃহবধু। একপর্যায়ে বিষয়টি জানতে পেরে বাঁধা প্রদান করায় পরকিয়া প্রেমিকের সহায়তায় স্বামীকে এলোপাথারি কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যার ঘটনায় পাষন্ড স্ত্রী ও পরকিয়া প্রেমিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি পুরাতন তালা ও রক্তমাখা বটি উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে সাভার মডেল থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিদুল ইসলাম।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো-টাঙ্গাইল জেলার সদর থানা এলাকার কান্দিলা গ্রামের মৃত আজমত আলী মিয়ার মেয়ে ও নিহতের স্ত্রী ইতি বেগম ওরফে রানী (৩৫) ও তাহার পরকিয়া প্রেমিক ঢাকা জেলার সাভার থানার সাদাপুর পুরানবাড়ি গ্রামের মৃত রহমত আলীর ছেলে মোঃ আব্বাস (৫০)। এদের মধ্যে ইতি বেগম সাভারের হেমায়েতপুর এলাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে আয়ার কাজ করতো এবং আব্বাস এলাকায় কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো। অন্যদিকে হত্যাকান্ডের শিকার নুর ইসলাম বেপারী (৫৫) ঢাকার ধামরাই থানার সুয়াপুর ইউনিয়নের কুঠিরচর গ্রামের নেহাজ উদ্দিন বেপারীর ছেলে। সে সাধাপুর পুরানবাড়ি এলাকার আক্কাস আলীর বাড়িতে কেয়ারটেকার থেকে স্থানীয়ভাবে কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিদুল ইসলাম বলেন, গত ২৬ জুন রাতে সাভার মডেল থানাধীন সাদাপুর ভাঙ্গা ব্রীজের পাশে অবস্থিত আক্কাস আলীর বাড়ি থেকে এক ব্যক্তির গলাকাটা মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এসময় নিহতের মাথায় আঘাত ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের জখম ছিলো। এঘটনায় নিহতের প্রথম স্ত্রীর বড় ছেলে আলিম বেপারী বাদি হয়ে সাভার মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোখলেছুর রহমান মামলাটি তদন্তের স্বার্থে সন্ধিগ্ধ নিহতের স্ত্রী ইতি আক্তার ওরফে রানী ও তাহার পরকিয়া প্রেমিক আব্বাসকে আটক করেন। পরবর্তীতে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তাহারা হত্যার সাথে সরসরি জড়িত বলে জানায় এবং বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
শাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, মামলাটির তদন্তকালে জানা যায়, আসামীদ্বয় এক থেকে দেড় বছর পূর্ব হইতে পরকিয়া প্রেম করিয়া আসিতেছে। একাধিকবার বিভিন্ন স্থানে তাহাদের মধ্য শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন হইয়াছে। শারীরিকভাবে অসুস্থ্য মৃত নুর ইসলাম বেপারী স্ত্রীর পরকিয়া প্রেমের বিষয়টি জানতে পেরে বাঁধা প্রদান করেন এবং স্থানীয়দেরকে জানান। এর ফলে আসামীরা ক্ষিপ্ত হয়ে পুর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী নুর ইসলাম বেপারীকে গত ২৬ জুন রাতে বাসায় ফেরার পর প্রথমে তালা দিয়ে মাথায় আঘাত করে। পরে পরকিয়া প্রেমিকের সহায়তায় স্ত্রী ইতি বেগম ওরফে রানী মিলে নিজের স্বামী নুর ইসলাম বেপারীকে এলোপাথারি কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা নিশ্চিত করেন। তদন্তের আরও জানা যায়, বিভিন্ন সময় স্বামী নুর ইসলাম বেপারীকে ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়াইয়া পরকিয়া প্রেমিক আব্বাসের সাথে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতো স্ত্রী ইতি বেগম ওরফে রানী।
আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোখলেছুর রহমান প্রমুখ।