সাভার প্রতিনিধিঃ সাভারে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে ওয়ার্কশপ কর্মী এক যুবককে প্রাইভেকারে তুলে নিয়ে হাতে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে মুক্তিপন আদায়ের ঘটনায় তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এসময় কৌশলে চক্রটির এক সদস্য দৌড়ে পালিয়ে গেছে। এঘটনায় ভুক্তিভোগী ওই যুবক বাদী হয়ে সোমবার দুপুরে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন। এর আগে রবিবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে সাভারের রাজফুলবাড়িয়া বাসষ্ট্যান্ড থেকে তাদেরকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন স্থানীয়রা।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- ঝিনাইদহ জেলার কোর্ট চাঁদপুর থানার আলোকদিয়া গ্রামের মোঃ শহিদুল ইসলামের ছেলে মোঃ জহিরুল ইসলাম (৪১), শরিয়পুর জেলার পালং থানার মাহমুদপুর গ্রামের মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে মোঃ এনামুল হক শামীম (৩৬) ও রাজবাড়ি জেলার পাংশা থানার পিপুল বাড়িয়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে মোঃ মনিরুল ইসলাম। এসময় তাদের হেফাজত থেকে লাল কালারের একটি টয়োটা প্রিমিও প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-গ-৩৩-৩৭৩৩), একটি স্টেইনলেস স্টীলের হ্যান্ডকাফ, তিনটি এটিএম কার্ড, ৪ টি মোবাইল ফোন, দুটি প্রেস আইডি কার্ড ও নগদ ৩৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দুইজন সাংবাদিক পরিচয় দিয়েছেন। যার মধ্যে জহিরুল ইসলামের ছবি সম্বলিত দৈনিক একুশের বানী পত্রিকার একটি প্রেস আইডিকার্ড, এনামুল হক শামীমের ছবি সম্পলিত আজকের সংলাপ পত্রিকার প্রেস আইডিকার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত অপর আসামী মনিরুল ইসলাম নিজেকে ঢাকা জেলা পুলিশের কনস্টেবল (বিপি নম্বর ৯৬১৬১৮৩২৬৪) পরিচয় দিয়ে এবং বর্তমানে সাভার পুলিশ টাউনে নিরাপত্তাকর্মীর দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানান।
থানা পুলিশ জানায়, দীর্ঘদন ধরে চক্রটি প্রাইভেটকার দিয়ে অপরাধ করে আসছিল। পুলিশ দীর্ঘদিন ধরেই চক্রটিকে হাতেনাতে আটকের চেষ্টা করে যাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার রাতে শাওন নামে একজন ওয়ার্কশপ কর্মীকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে সাভারের তেঁতুলঝোড়া ভরারী এলাকা থেকে প্রাইভেটকারে তুলে নেয় চক্রটির চার সদস্য। পরে শাওনের হাতে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে তার মাকে ফোন করে টাকার বিনিময়ে রাজফুলবাড়িয়া এলাকায় ছেড়ে দেয়। এসময় ওই এলাকা থেকে আরও গাড়ির হেলপার দুই যুবককে একইভাবে গাড়িতে তুলে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে মুক্তিপন আদায়ের চেষ্টা করে। তবে বিষয়টি সন্দেহ হওয়ায় স্থানীয়রা জরুরী সেবা নাম্বারে ফোন করে পুলিশের পরামর্শে ভুয়া ডিবি সদস্যদের আটক করেন। তবে এসময় সোহেল নামে একজন দৌড়ে পালিয়ে যায়। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই ও মুক্তিপন আদায়কারী চক্রটি বহুদিন যাবৎ সাভারের শিল্প এলাকায় নিরীহ মানুষদেরকে জিম্মি করে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছিল। এই ছিনতাইকারী সদস্যদের গডফাদার জনৈক জাভেদ মোস্তফা নামে এক ব্যক্তি তাদেরকে দিয়ে দিনের বেলায় সাংবাদিক ও রাতে ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহার করে আসছেন। এঘটনায় তাকেও গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান ভুক্তভোগীরা।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলে, ডিবি পুলিশ পরিচয়ে কয়েকজনকে আটক করে তাদের হাতে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে মুক্তিপন আদায়ের ঘটনায় তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এঘটনায় ভুক্তভোগী এক যুবক বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে সোমবার দুপুরে গ্রেপ্তারকৃতদেরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ সেপ্টেম্বর আশুলিয়ার চারাবাগ থেকে একই চক্রের চার সদস্য, এবং ১৬ সেপ্টেম্বর আশুলিয়ার পলাশবাড়ি এলাকা থেকে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।