দলীয় পরিচয়ে ঝুট ব্যবসা দখলের মহড়া, আতঙ্কে কারখানা কর্তৃপক্ষ

সাভার প্রতিনিধিঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর সাভারের ক্ষমতাশালী নেতাকর্মীরাও আত্মগোপনে চলে যান।
ক্ষমতার পালাবদলের পর দখল ও পালটা দখলে অস্থিরতা বিরাজ করছে সাভার-আশুলিয়ার গার্মেন্টস কারখানার ঝুট ব্যবসায়। রক্ষা পায়নি পাড়া মহল্লার ইন্টারনেট ও ডিশ ব্যবসাও। একসময় আ.লীগ নেতারা ক্ষমতার জোরে এসব ব্যবসা পরিচালনা করলেও বর্তমানে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যবসাগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। ফলে ঝুট ব্যবসায় দখল ও পালটা দখল নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ, শ্রমিক ও স্থানীয়দের মাঝে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশুলিয়ার কাঠগড়া আমতলা এলাকায় অবস্থিত কমফিট কম্পোজিট নীট লিমিটেড (ইউনিট-২) মালিক পক্ষের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তাদের সকল নিয়ম মেনেই ঝুট ব্যবসা করে আসছেন একই এলাকার মেসার্স মানিক এন্টার প্রাইজের মালিক মানিক পলান। কিন্তু ক্ষমতার পালাবদলের কারনে সেই বৈধভাবে চুক্তিপত্র করা ব্যবসা জোরপূর্বক দখলে নেয়ার চেষ্ঠা করছে স্থানীয় বিএনপি’র নেতাকর্মীরা।

মেসার্স মানিক এন্টার প্রাইজের পক্ষে সাহা দেওয়ান অভিযোগ করেন, কারখানটির জমি থেকে শুরু করে সমস্ত স্থাপনা আমরা করে দিয়েছি। আমি নিজেও বিএনপি’র রাজনীতির সাথে জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্নভাবে কমফিট কম্পোজিট নীট লিমিটেড (ইউনিট-২) কারখানা ঝুট ব্যবসায় করে আসলে এক সপ্তাহ তলে আশুলিয়া ইউনিয় যুবদলের সভাপতি জাকির দেওয়ানের নের্তৃত্বে আসাদুর সরকার, সাইদুর সরকার ও মোতালেব শতাধিক লোকজন নিয়ে আমার ব্যবসা দখলের জন্য কারখানার সামনে মহড়া দিচ্ছে। পাশাপাশি তারা বিভিন্ন সময়ে কারখানার ভিতরে প্রবেশ করে আমাদের সাথে করা চুক্তিপত্র বাতিল করে তাদের নামে চুক্তিপত্র করার জন্য কর্তৃপক্ষকে চাপ সৃষ্টি করছে। বর্তমানে কারখানার ভিতরে ঝুট জমে যাওয়ায় তাদের ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের কারনে সেসব ঝুট বেড় করতে পারছিনা। এই অবস্থায় নিজের নিরাপত্তার পাশাপাশি আমার বৈধ ব্যবসা রক্ষার জন্য পুলিশ প্রশাসনসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার সহযোগিতা কামনা করছি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জাকির দেওয়ান বলেন, মোতালেব ও সাহা দেওয়ানের মধ্যে ঝুট ব্যবসা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হওয়া আমরা কয়েকজন সেটি মীমাংসা করে দেয়ার জন্য কারখানায় যাই। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা।

জানতে চাইলে মোতালেব সরকার বলেন, আমি আগে ওই কারখানায় ব্যবসা করতাম। কিছুদিন আগে কর্তৃপক্ষ মানিক এন্টারপ্রাইজের সাথে চুক্তিবন্ধ হয়ে তাদেরকে ঝুট দিয়ে আসছে। এখন কর্তৃপক্ষ যদি আমাকে ঝুট দেয় তাহলে আমি ব্যবসা করবো নইলে করবোনা। আমি কোন ঝামেলাই যেতে চাইনা।

কারখানা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্ষমতার পালাবদলের পরপরই বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ-সদস্য ডা. মোঃ দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবুর নাম ভাঙ্গিয়ে আশুলিয়া ইউনিয় যুবদলের সভাপতি জাকির দেওয়ানের নের্তৃত্বে আসাদুর সরকার, সাইদুর সরকার ও মোতালেবসহ একটি চক্র কমফিট কম্পোজিট নীট লিমিটেড (ইউনিট-২) কারখানার ঝুট ব্যবসার জন্য যোগাযোগ করছেন। তারা নেতাকর্মীদের নিয়ে দফায় দফায় কারখানা আসা-যাওয়াসহ লোকজন নিয়ে মহড়া দিয়ে যাচ্ছে। যদিও বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও উর্দ্ধতন নেতারা শুরু থেকেই এসব দখলবাজি ও চাঁদাবাজি থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দিয়ে আসছেন। সেই নির্দেশনা অমান্য করে খোদ সাবেক সাংসদের নাম ভাঙ্গিয়ে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দখলবাজি এবং চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখেছে। তারা ছাত্র-জনতার সফল আন্দোলনকে কলঙ্কিত করতে বিএনপির ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থানে জমি, ঝুট ব্যবসা, নেট ব্যবসাআগুনে আলু পোড়া দিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করছেন।

কমফিট কম্পোজিট নীট লিমিটেড (ইউনিট-২) কারখানার সহকারী ম্যানেজার (কমপ্লায়েন্স) বিনয় কৃষ্ণ শীল বলেন, যেহেতু মানিক এন্টারপ্রাইজের সাথে আমাদের চুক্তি রয়েছে তারা চাইলেই ঝুট নিয়ে যেতে পারেন। অন্য কোন পক্ষের সাথে নতুন করে চুক্তির কোন ইচ্ছা আমাদের নাই।

ঝুট ব্যবসা দখলের বিষয়ে জানতে ডা. দেওয়ান মোঃ সালাউদ্দিন বাবুর মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!