সাভার প্রতিনিধিঃ সাভারের আমিনবাজার ইউনিয়নের বড় বড়দেশী মৌজায় অবৈধভাবে মাটির তৈরী চুল্লিতে অবাধে কাঠ পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে কয়লা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন ধরনের বনজ ও ফলজ গাছ কেটে এখানে পুড়ানোর ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ ও জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে অন্যদিকে কাঠ পোড়ানোর অবৈধ চুল্লির ধোঁয়ায় শ^াসকষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে ভুগছেন স্থানীয়রা।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বড় বড়দেশী মৌজায় অবৈধভাগে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি কয়লা তৈরির কারখানা। অনুমোদনহীন এসব কারখানায় আইনের তোয়াক্কা না করেই অবাধে কাঠ পোড়ানোর ফলে ধ্বংস হচ্ছে বনজ সম্পদ ও গাছপালা। পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাও এই অবৈধ চুলায় সৃষ্ট ধোঁয়ায় কারনে নানা ধরনের রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন।
সরেজমিনে কারখানাগুলো ঘুরে দেখা যায়, আমিনবাজার ইউনিয়নের বড় বড়দেশী মৌজায় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কয়েকজন গাছ খেঁকো ব্যক্তি কৃষি জমিতে নির্মিত এসব অবৈধ চুল্লিতে দিন-রাত গাছ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করছে। উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন ছাড়াই এসব কয়লা তৈরির কারখানায় দেদারছে পোড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের গাছ। ইট ও শক্ত কাঁচা লাল মাটি দিয়ে তৈরী করা চুল্লিতে গাছ পুড়িয়ে তৈরী করা হচ্ছে শতশত মণ কয়লা।
কয়লা শ্রমিকরা জানায়, প্রথমে চুল্লির মধ্যে সারিবদ্ধভাবে গাছ সাজিয়ে একটি মুখ খোলা রেখে অন্য মুখগুলো মাটি এবং ইট দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে খোলা মুখে দিয়ে আগুন দেয়া শেষ হলে সেটিও বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর কয়েকদিন পোড়ানোর পর চুলা থেকে কয়লা বের করা হয়। প্রতিটি চুল্লিতে প্রতিবার কয়েক’শ মণ কাঠ পোঁড়ানো হয়। কাঠ পুড়ে কয়লা হতে সময় লাগে সাত থেকে আট দিন। পরে কয়লা ঠান্ডা করে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে চটের বস্তায় ভরে ট্রাক, পিকঅ্যাপসহ বিভিন্ন যানবাহনযোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হোটেলে পাঠানো হয়।
এলাকাবাসীরা জানায়, একটি চুল্লিতে এক সপ্তাহে কমপক্ষে কয়েক’শ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। প্রতি বস্তা কয়লা এক হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এভাবে শত শত টন কাঠ পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে লাখ লাখ টাকায় বিক্রী করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
এদিকে কয়লা তৈরির চুল্লির কালো ধোঁয়ায় শিশুসহ এলাকার মানুষের মধ্যে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে। ইতিমধ্যে আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন গাছপালায় মড়ক দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন এসব চুল্লিতে বিশাল পরিমাণের গাছ, গাছের গুড়ি পুড়িয়ে কয়লা বানানোর ফলে খুবই দ্রুতই ওই এলাকায় অক্সিজেন ঘাটতিসহ নানা প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগবালাই বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সচেতন এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ দিনের পর দিন অবৈধভাগে অনুমোদনহীন চুলায় গাছ পোড়ানোর কারনে পরিবেশ দূষিত হওয়ার পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে এলাকার ফসলি জমি। সেই সঙ্গে জীববৈচিত্রও হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। এসব বিষয়ে নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ পরিবেশ অধিদপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না বলেও জানান ভুক্তভোগীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাখানার পাশ দিয়ে হেটে যাওয়া কয়েকজন যুবক জানান, অবৈধ এসব চুল্লির ধোঁয়ায় চোখ আমাদের জ্বালাপোড়া করে এবং খুশখুশে কাশি হয়। তবে এবিষয়ে অবৈধ কারখানার মালিকরা ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি না হলেও তারা বলেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তারা প্রকাশ্যে এসব অবৈধ কারখানায় কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করছেন। তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ দূষনকারী অবৈধ কয়লার কারখানা বন্ধসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।