সাভার প্রতিনিধিঃ সাভারে দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস সঙ্কটের কারনে চরম দূর্ভোগে পড়েছেন কয়েক হাজার গ্রাহক। তাই বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সব বয়সের ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা রবিবার দুপুরে সাভারের শিমুলতলা এলাকায় অবস্থিত তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাভার আঞ্চলিক কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন।
এসময় প্রায় চার শতাধিক গ্রাহক প্রতিষ্ঠানটির নীচ তলা থেকে তৃতিয় তলা পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহের দাবি জানান। গ্রাহদের একটি গ্রুপ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাভার আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী অজিত চন্দ্র দেবের কক্ষে অবস্থান নিয়ে তাদের সমস্যার বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন।
বিক্ষোদ্ধ গ্রাহকরা বলেন, পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ এবং নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ না থাকায় আমরা দীর্ঘদিন ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছি। ঋনের টাকা বাড়ি করে গ্যাস না থাকার কারনে বাসা ভাড়া দিতে না পারছেন না অনেকেই। সময়মতো রান্না করতে না পারায় খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছি। তাই বাধ্য হয়ে চলমান এই গ্যাস সংকটের স্থায়ী সমাধানের দাবিতে আমরা বিক্ষোভ করছি।
বিক্ষোভকারী আব্দুল বারেক বলেন, গ্যাস ব্যবহার না করেও আমাদের প্রতি মাসে বিল দিতে হচ্ছে। গ্যাস লাইনে ত্রুটি রয়েছে। কিন্তু বারবার বলার পরও তিতাস গ্যাস কতৃপক্ষ সেই সমস্যার সমাধান করছে না। অপর গ্রাহক আব্দুল মান্নান বলেন, তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড এলাকার পানপাড়া, নয়াপাড়া, দত্তপাড়া, ভাওয়ালিয়াপাড়া, কুটিবাড়ি, মাঝিপাড়া, কৃষ্ণনগর গ্রামের চার শতাধিক বাড়িতে গ্যাস না থাকায় আমরা ঠিকমতো রান্না করতে পারিনা। দীর্ঘদিন ধরে বিরতিহীনভাবে গ্যাস সরবরাহ না থাকায় আমাদের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ।
ভুক্তভোগী রেজাউল মাস্টার, আলম মিয়া, মাসুদ রানা মিন্টু ও আক্তার হোসেন জানান, বারবার অভিযোগ করেও গ্যাস সংকটের স্থায়ী সমাধান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে আজ ভুক্তভোগীরা তিতাস গ্যাস অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। ভুক্তভোগী গ্রাহক মাসুদ রানা জানান, বাসা বাড়িতে গ্যাসের সংযোগ থাকলেও গ্যাস থাকে না। কয়েক বার তিতাস গ্যাস কতৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিন্টু মিয়া জানান, গ্রাহকরা তাদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে তিতাস অফিস ঘেরাও করে অবস্থান নিয়েছিলেন। আমিও চাই গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ করা হোক।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর সাভার আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী অজিত চন্দ্র দেব বিক্ষোভকারীদের সমস্যাগুলো সাতদিনের মধ্যে চিহ্নিত করার পাশাপাশি সমাধানের আশ্বাসে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
অজিত চন্দ্র দেব বলেন, বিভিন্ন ওয়াশিং ফ্যাক্টরি গ্যাস টানার মেশিন দিয়ে অবৈধ ভাবে গ্যাস সরবরাহ করে থাকে এজন্য সেই এলাকার আবাসিক বাড়িগুলো নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে গ্যাস পাচ্ছে না। এছাড়া সাভারে কিছুটা গ্যাস সংকটের কারণেও এই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা সাত দিনের মধ্যে এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করব বলে জানান তিনি। এসময় পুলিশের উপস্থিতিতে বিক্ষোভকারীরা সাতদিনের আলটিমেটাম দেন এবং সাতদিনের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে তারা আবারও তিতাস গ্যাস অফিস ঘেরাও করার ঘোষনা দেন।
সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হারুনুর রশিদ বলেন, তিতাস গ্যাস অফিস ঘেরাওয়ের সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। তবে গ্রাহকরা কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে শান্তিপূর্নভাবে তাদের দাবি উপস্থাপন করেছে। এছাড়া কর্তৃপক্ষও তাদের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের আশ্বাস দেয়ায় কোন ধরনের অপ্রীতির পরিস্থিতির সৃষ্ঠি হয়নি বলেও জানান তিনি।