নূন্যতম মজুরি প্রত্যাখ্যান করে আশুলিয়ায় শ্রমিক বিক্ষোভ

আশুলিয়া প্রতিনিধিঃ সাভারের আশুলিয়ায় নতুন ঘোষিত নুন্যতম মজুরি প্রত্যাখান করে বিক্ষোভ করেছে তৈরী পোশাক শ্রমিকরা। বিক্ষোদ্ধ শ্রমিকরা বিভিন্ন কারখানায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ভাংচুর চালায়। এসময় পরিস্থিতি সামাল দিতে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদেরকে ছুটি দিয়ে দেয়। বুধবার দুপুরের পর থেকে আশুলিয়ার জামগড়া, নরসিংহপুর, জিরাবো কাঠগড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিক ও শিল্প পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, বুধবার সকাল থেকে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার কারখানা গুলোতে শ্রমিকরা শান্তিপূর্নভাবে কাজে যোগদান করে। একপর্যায়ে বেলা ১১ টার পর নরসিংহপুর এলাকার কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা মজুরি বোর্ড ঘোষিত নূন্যতম মজুরি ১২,৫০০ টাকা করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে কাজ বন্ধ করে দেয়। এসময় শ্রমিকরা কাজ না করায় বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

পরবর্তীতে কারখানা থেকে বের হয়ে এসব শ্রমিকদের বড় একটি অংশ নিজ নিজ বাসায় চলে গেলেও আরেকটি অংশ আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের শারমিন গ্রুপের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় শ্রমিকরা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে ও কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

বিক্ষোদ্ধ শ্রমিকরা মিছিল করতে করতে কাঠগড়া ও জিরাবো এলাকার বিভিন্ন তৈরী পোশাক কারখানার মূল ফটকে ইট-পাটকেল করে। এসময় ওই এলাকার আজমত গ্রুপ, গ্রীন লাইফ নিটেক্স, জিহান গার্মেন্টস, লুসাকা গ্রুপ, ফিউচার ক্লথিং লিমিটেড, ক্রসওয়্যার লিমিটেড, কন্টিনেন্টাল গার্মেন্টসহ অন্তত ৩০টি কারখানার শ্রশিকদেরকে ছুটি দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। এসময় বিক্ষোদ্ধ শ্রমিকদের ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দেয় শিল্প পুলিশের সদস্যরা।

বিক্ষোদ্ধ শ্রমিকরা জানান, নূন্যতম মজুরির দাবিতে পোশাক শ্রমিকরা কয়েক দিন ধরে টানা আন্দোলন করে আসছে। গতকাল মজুরি ঘোষণা করলে তা শ্রমিকদের দাবির তুলনায় অনেক কম। ওই ঘোষণা প্রত্যাখান করে সড়কে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

ফিউচার ক্লথিং লিমিটেড কারখানার সুইং অপারেটর জ্যাকব বলেন, সকাল থেকে আমরা শান্তিপূর্নভাবে কারখানায় কাজ করলেও দুপুরের বিরতির পর বেশকিছু ছেলে এসে আমাদের কারখানায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে ছুটি দিয়ে দিলে সকল শ্রমিকরা বের হয়ে বাড়ি চলে যায়।

ক্রসওয়্যার লিমিটেড কারখানার ফিনিসিং আয়রনম্যান আশরাফুল বলেন, বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্যের যে উর্দ্ধগতি আমরা অনেক কষ্টে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি। এজন্য নূন্যতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে আন্দোলন চলছিলো। কিন্তু মঙ্গলবার মজুরি বোর্ড কর্র্তৃক নূন্যতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা ঘোষনার পর আজ আবারও শ্রমিক অসন্তোষ শুরু হয়েছে।

লুসাকা গ্রুপের সিকিউরিটি ইনচার্য সার্জেন্ট কালাম বলেন, সকাল থেকে কারখানায় শান্তিপূর্নভাবে কাজ করছিলো শ্রমিকরা। দুপুরের পর বহিরাগত কিছু ছেলে এসে কারখানায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ভাংচুর শুরু করে। এসময় শ্রমিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে ছুটি দিয়ে বের করে দেয়া হয়।

আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদ নাসের জনি বলেন, নরসিংহপুর ও কাঠগড়া এলাকার বেশকিছু কারখানার শ্রমিক কাজ বন্ধ করে দিলে কর্তৃপক্ষ কারখানাগুলোতে ছুটি ঘোষণা করে। পরবর্তীতে কিছু শ্রমিক রাস্তায় অবস্থান নিলে আমরা তাদের বুঝিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি। তবে কিছু জায়গায় উশৃঙ্খল শ্রমিকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাংচুর চালিয়েছে বলে খবর পেয়ে আমরাদের লোকজন গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।

এছাড়া কারখানাগুলোর নিরাপত্তার স্বার্থে একালার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসহ বিভিন্ন কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে সকাল থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে টহল দিতে দেখা গেছে বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!