বিচারের দীর্ঘসুত্রিতায় তাজরীনের ১১ বছর-নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা

আশুলিয়া প্রতিনিধিঃ পোশাক শিল্পের ইতিহাসে আশুলিয়ার নিশ্চিতন্তপুর এলাকায় অবস্থিত তুবা গ্রুপের তাজরিন ফ্যাসনের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনার ১১ বছর পূর্তিতে নিহত শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন নিহত শ্রমিকদের পরিবার, আহত শ্রমিক, ও পুলিশসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। শুক্রবার সকাল থেকে নিহতের স্মরণে পুড়ে যাওয়া কারখানাটির মূল ফটকের সামনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সর্বস্তরের সাধারন মানুষ।

এদিকে অগ্নিকান্ডের ১১ বছর হতে চললেও এখনও বিচার শেষ হয়নি। সাক্ষ্য গ্রহণেই আটকে আছে মামলা। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর ১৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আসামিরা হলেন তাজরীনের এমডি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, তাঁর স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা দুলাল, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলামসহ ১৩ জন। বর্তমানে আসামিরা সবাই জামিনে আছেন।

সরেজমিনে আশুলিয়ার নিশিন্তপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শুক্রবার সকাল থেকে নিহত শ্রমিকের পরিবার, আহত শ্রমিক, শিল্প পুলিশসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে তাজরীনের মূল ফটকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবদেন করেন।

ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স (ইউএফজিডব্লিউ) এর সাভার আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোঃ ইমন শিকদার বলেন, তাজরীন ট্রাজেডির আজ ১১ বছর পার হয়ে গেলেও এখনও এই ঘটনায় খুনি দেলোয়ারসহ জড়িতদেরকে উপযুক্ত শাস্তি হয়নি। এছাড়া আহত ও নিহতদের পরিবারের অনেকেরা যথাযথ সাহায্য সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তারা আজও দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। ক্ষতিগ্রস্থদের পূর্নবাসনসহ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি খুনি দেলোয়ারের শাস্তি নিশ্চিতে সরকার প্রধানের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, ১১ বছর আগে এই দিনে মালিকপক্ষের অব্যবস্থাপনা, কাঠামোগত ত্রুটি এবং সরকারি ছাড়পত্রে কারখানা চালাবার সুযোগের কারণে তাজরীনে ১১২ জন শ্রমিক আগুণে পুড়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি এই ঘটনাকে কাঠামোগত হত্যাকান্ড হিসাবে অভিহিত করে বলেন, বিচার প্রক্রিয়ার ধীর গতি এবং সরকারের অবহেলার কারণে এতো বড় শ্রমিক হত্যার বিচার হয়নি। এই ঘটনা শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক ঘটনা হিসাবেই স্থান করে নিয়েছে। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দেলোয়ার হোসেনসহ ১৩ আসামীর শাস্তি হলে এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ হতো, অন্যান্য কারখানার মালিকরা সতর্ক হতো, রানা প্লাজা, রূপগঞ্জের মতো ঘটনায় নির্মম মৃত্যু দেখতে হতো না বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ কবির হোসেন বলেন, তাজরিন গার্মেন্টসে অগ্নিকান্ডের ঘটনার প্রায় এক যুগ হতে চলেছে অনেক ভাই-বোন অসুস্থ অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। এখনও অসুস্থতা নিয়ে অনেক শ্রমিক কষ্টে দিন পার করতেছে। এত বছরেও সরকার কিংবা বিজিএমইএ কেউই আমাদের খোঁজ রাখেনি।

শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, তাজরিন অগ্নিকান্ডের ঘটনা একটি বেদনাদায়ক ঘটনা। এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত রিপোর্ট বিজ্ঞ আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। বিচারকাজ যাতে তরান্বিত হয় সেদিকেও আমরা নজর রাখছি। আমাদের সবরকমের প্রচেষ্টা থাকবে। এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। ইন্ডাস্ট্রি করার ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলোর দিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। আমরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ সেসব বিষয় খেয়াল রাখছি।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরিন ফ্যাশনসে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে কারখানার ভিতরে আগুনে পুড়ে মারা যায় ১১১ জন শ্রমিক। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন আরও ৭ শ্রমিক। এঘটনায় আহত হয়ে পঙ্গুত্ব নিয়ে জীবন যাপন করছেন আরও প্রায় শতাধিক শ্রমিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!