বৃদ্ধাকে মিথ্যা মাদক মামলায় ফাসানোর অভিযোগ

সাভার ( ঢাকা) প্রতিনিধিঃ সাভারের আশুলিয়ায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোক পরিচয়ে সাদা পোশাকে একদল লোক মো. আবুল কালাম (৫২) নামে এক ব্যাক্তিকে আটক করে মারধর ও তার বাড়িতে লুটপাট চালানোর অভিযোগ করেছে আবুল কালামের পরিবারের সদস্যরা। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানায় ওই ব্যাক্তিরা মুঠোফোনে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে আটক ব্যক্তিকে ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব দেয় ।

ঘটনাটি গত ২৮ অক্টোবর সাভারের আশুলিয়া থানাধীন আউকপাড়া এলাকায়। ঘটনার পর ওই ব্যাক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিক জরুরী সেবা নাম্বার ৯৯৯ এ কল করে সাহায্য চাওয়া হয় এবং পরদিন নিকটবর্তী আশুলিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু পরিবারটির দাবী পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের কোন ধরনের সহযোগিতা করা হয়নি।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী আবুল কালামের স্ত্রী নিপা জানান, ঘটনার দিন আমি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার সাথে আমার বড় মেয়েও ছিলো তাই বাসা ফাঁকা ছিলো। সেসময় আমার স্বামীকে আকবর, জিয়া, জিয়াসমিন, নয়ন, সুমন নামে একদল লোক সিএন্ডবি বাসস্ট্যান্ড থেকে আটক করে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। সেখানে আমার স্বামীর সাথে আরো কয়েকজনকেও ওই গাড়িতে তুলে তারা। পরে বিভিন্ন স্থানে ঘুরাইয়া আমার স্বামীকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসে। পরে ঘরে ঢুকে আমার স্বামীকে মারধর করা হয়। এ সময় আমার স্বামীর চিৎকার শুনে আশপাশের প্রতিবেশীরা ছুটে আসলে তাদেরকে ঘরে প্রবেশ করতে দেয়া হয় নাই। পরে তারা আমার ঘরে থাকা ওয়ারড্রপের ড্রয়ার ভেঙে নগদ ৬০ হাজার টাকা এবং শোকেসের গ্লাস ভেঙ্গে একটি স্বর্ণের চেইন, একজোড়া রুপার নুপুর ও বেশকিছু দামী মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। পরে সেদিন বিকেলে তারা আমার স্বামীর মুঠোফোন থেকে আমার মুঠোফোনে কল করে আমার স্বামীকে আটক করার কথা জানায় এবং ৫ লক্ষ টাকা দাবি করে অন্যথায় আমার স্বামীকে হত্যা মামলা অথবা মাদক দিয়ে ফাসিয়ে দেয়ার কথা জানায়।

ভুক্তভোগীর বড় মেয়ে কলি আক্তার জানান, ঘটনার দিন আমরা বাসায় ছিলাম না। বিকেলে আমার বাবার নাম্বার থেকে ফোন করে বাবাকে আটক করার কথা জানিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। এ সময় আমরা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আমার বাবাকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে ফোন রেখে দেয় তারা। পরবর্তীতে তাৎক্ষণিক আমরা জরুরী সেবা নাম্বার ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে সাহায্য চাইলে আমাদেরকে জানানো হয় অবরোধসহ নানা কারণে আজ পুলিশ ব্যস্ত। পরদিন সকালে আমরা আশুলিয়া ফাঁড়িতে যোগাযোগ করলে পুলিশ আমাদের জানায় আপনার বাবা কে মাদকদ্রব্যের লোকজন আটক করেছে এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। পরে আমরা বিষয়টি নিয়ে কোর্টে অভিযোগ জানালে কোর্ট থেকে আশুলিয়া থানায় আমাদের অভিযোগ নেয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু আমরা থানায় গেলেও আমাদের অভিযোগটি তারা গ্রহণ করেনি। পরে ঘটনার ৩দিন পর আমরা জানতে পারি আমার বাবাকে ১০৫ পিস ইয়াবা দিয়ে আদালতে চালান করে দিয়েছে। কিন্তু আমার বাবাকে আটকের সময় তারা আমাদের প্রতিবেশী সহ অন্য কাউকেই মাদক রিকভারির বিষয়টি জানায়নি। এমনকি আমাদের কাছে যখন ফোন করে টাকা চাইলো তখনো সেটা ইয়াবা উদ্ধারের কথা বলেনি। এবং আমার বাবার বিরুদ্ধে করা সেই মামলায় যে দুজনকে সাক্ষী বানানো হয়েছে তাদেরকে আমাদের এলাকার কেও চিনেনা। তাদের ঠিকানা দেয়া হয়েছে ঢাকার লালবাগ এলাকায়। আমার প্রশ্ন আমার বাবাকে আটক করা হয়েছে আশুলিয়া থেকে তাহলে সাক্ষী কিভাবে লালবাগের হয়? আটকের সময় তো আমাদের এখানে অনেকেই উপস্থিত ছিলো তাদের কেন সাক্ষী করা হলোনা? এতেই প্রমাণিত হয় আমার বাবাকে পরিকল্পিত ভাবে ফাঁসানো হয়েছে।

এদিকে মামলাটির বাদী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা (ক-সার্কেল) উপ-পরিদর্শক আকবর আলীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি বর্তমানে সেখানে কর্মরত নেই আমি খুলনায় বদলী হয়ে গেছি। তবে সেদিনের সেই অভিযানে আমরা নুসরাত ম্যাডামের নেতৃত্বে সেখানে গিয়েছিলাম আমার সাথে আরো ছিলো সহকারী উপ-পরিদর্শক জিয়া, সোর্স নয়নসহ কয়েকজন। আমাদের বিরুদ্ধে যেই অভিযোগ করা হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যে। বিষয়টি নিয়ে আপনারা নুসরাত ম্যাডামের সাথে কথা বলেন। এছাড়া আশুলিয়ার ঘটনায় সাক্ষী হিসেবে লালবাগের দুজন ব্যাক্তির নাম দেয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা (ক-সার্কেল) পরিদর্শক নুসরাত জাহান বলেন, টাকা চাওয়া বা ঘর থেকে টাকা নেয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। যদি আমার টিমের কেও এমন কিছু করে থাকে আর সেটি যদি প্রমান হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।

এদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস ও গোয়েন্দা) তানভীর মমতাজকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানানো হলে তিনি প্রতিবেদককে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, আপনি একটি ভালো কাজ করেছেন আমরা চাই আপনারা এধরণের অন্যায়ের বিষয়গুলো আমাদের জানান। এখন আপনাদের কাছে যারা বিষয়টি জানিয়েছেন তাদেরকে একটু কষ্ট করে আমার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন আমি বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!