সাভার প্রতনিধিঃ শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় এক ঘন্টার ভারী বর্ষনে বাইপাইল আব্দুল্লাহপুর সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানিতে তলিয়ে গেছে। পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছেনা। যে কারনে সড়কটির ইউনিক থেকে জামগড়া পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়ক পানির নীচে তলিয়ে যাওয়া ওই এলাকাটি নদীতে পরিনত হয়েছে। চলাচলে বিঘœ ঘটনার পাশাপাশি খানাখন্দ যুক্ত সড়কটিতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। কর্মজীবি মানুষের দুর্ভোঘ বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্রুত সড়কটি সংস্কারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
সরেজমিনে শনিবার সকালে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় গিয়ে দীর্ঘ্য যানজটের চিত্র দেখা গেছে। এসময় রিক্সা নিয়ে শাখা সড়ক দিয়ে ইউনিক এলাকায় গিয়ে দেখা যায় পুরো সড়কটি পানির নীচে তলিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও পানি সড়ক ছাপিয়ে ঢুকে পড়েছে রাস্তার পাশে থাকা বিভিন্ন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলেও এই অবস্থা থেকে উত্তরনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা কিংবা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি সমাধানের কোন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি। মাঝে মধ্যে সড়ক ও জনপথ কর্র্তৃপক্ষ মেশিন দিয়ে পানি সেচার ব্যবস্থা করলেও পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পরক্ষনেই বৃষ্টিতে সড়কটি পানির নীচে চলে যায়। বৃষ্টি না হলেও সড়কটিতে সারা বছরই আশপাশের কারখানা ও বাসাবাড়ির ড্রেনের পানি জমে থাকায় ভোগান্তি এখন পথচারীদের গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে।
ট্রাক চালক মোঃ রাশেদ বলেন, সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কটি তলিয়ে যাওয়ায় অনেক সময় আমরা সড়ক থেকে নীচে নেমে যাই এবং খানাখন্দে পড়ে গাড়ি উল্টে গিয়ে দূর্ঘটনার ঘটে থাকে।
রিক্সা চালক শাহআলম বলেন, বৃষ্টিতে রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় গাড়ি চালাতে সমস্যা হয়। একবার যদি মটরে পানি ঢুকে নষ্ট হয়ে যায় তাহলে ৮ হাজার টাকা জরিমানা লাগে। একারনে ঝুঁকি নিয়ে রিক্সা চালাতে হয় অন্যথাকায় না খেয়ে থাকতে হবে। সড়কে জমে থাকা বেশীরভাগই স্থানীয় কলকারখানা ও বাসাবাড়ির পানি। তার উপর বৃষ্টি হওয়ায় এখন বড় গাড়িগুলো দ্রুত গতিতে চলাচল করায় যাত্রিসহ আমরা ময়লা পানিতে ভিজে যাই।
গার্মেন্টস শ্রমিক সোহেল রানা বলেন, সারাবছরই বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কটি পানিতে তলিয়ে থাকে। সকালে বৃষ্টির কারনে সড়কের কোন কোন স্থানে হাটু পানির বেশী হওয়ায় দিনের মধ্যে চারবার পানিতে ভিজে যাতায়াত করতে হয়। বিভিন্ন সময় ময়লা পানির কারনে আমাদের শরীরে চুলকানিসহ চর্মরোগ দেখা দেয়।
অপর গার্মেন্টস কর্মী মোঃ ইউসুফ বলেন, ময়লা পানির জন্য আমাদের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। বিভিন্ন সময় পড়ে রিক্সা উল্টে গিয়ে দূর্ঘটনায় পড়তে হয়। একই কথা জানালেন নারী শ্রমিক শিল্পি বেগম। তাদের সকলের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ সড়কটি উচু করা হোক।
সড়কের পাশে দোকানি শরিফুল হক জানান, সবসময় পানি জমে থাকার কারণে পিচঢালা সড়কের পরিবর্তে ইট সলিং করে বানানো সড়কে খানাখন্দের অভাব নেই। প্রায়ই রিকশা-ভ্যান উল্টে ঘটছে দুর্ঘটনা। বছরের পর বছর ধরে এমনটা চলে আসলেও দেখার যেন কেউ নাই। এছাড়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্পে ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ সড়কটি মেরামত করা হবে বলে শুনেছি সেটারও কোন খবর নাই।
ফার্নিচার ব্যবসায়ী আসলাম হোসেন বলেন, ‘দোকানের সামনে প্রায় সময় হাঁটুপানি থাকায় ময়লা পানি মারিয়ে কাস্টমার না আসায় ব্যবসায় ধস নেমেছে। সড়ক ভালো হওয়ার আশার গত ৫ বছরে প্রায় ৩০ লাখ টাকার লোকসান হয়েছে। আর কত দিন এমন কষ্ট সইতে হবে তা জানিনা। পাশর্^বর্তী বিভিন্ন কলকারখানার পানি সড়কটিতে ফেলার কারনে সারা বছরই পানি জমে থাকে। এছাড়া বৃষ্টি হলেই সড়কটি নদীতে পরিণত হয়।
ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মোঃ শাহাবুদ্দিন খান বলেন, কলকারখানা ও বাসা বাড়ির বর্জে ড্রেনেজ ব্যবস্থা বিকল হওয়ায় বছরের প্রথম ভারি বৃষ্টিতে বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের লোকজন কাজ করছে, প্রয়োজনে পাম্প দিয়ে সড়কের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।