সাভারে খুনির গলায় মন্ত্রী’র মালা,পুরস্কার জেলা আওয়ামী লীগের পদ!

অনলাইন ডেস্কঃ স্ত্রী হত্যার অভিযোগে সাভার থানা যুবলীগের সভাপতি পদ থেকে বহিস্কৃত সেলিম মন্ডল ঢাকা জেলা আওয়ামীগে পদ পেয়েছেন। স্ত্রী হত্যা মামলায় অভিযুক্ত প্রধান আসামী সাবেক যুবলীগের এই নেতাকে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি সেলিম মন্ডলের অনুসারী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্ট দিলে সমালোচনার মুখে পড়েন জেলার হেভী ওয়েট নেতারা।

সেলিম মন্ডলের পদ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ধামরাই (ঢাকা -২০) আসনের সংসদ সদস্য বেনজির আহমেদ বলেন, সেলিম মন্ডল যে স্ত্রী হত্যা মামলায় অভিযুক্ত প্রধান আসামী তা আমাদের জানা ছিল না। তাছাড়া বিষয়টি কেউ আমাদের নজরে আনেননি। নজরে আনা হলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্হা নেওয়া হবে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, সেলিম মন্ডল সাভারের (ঢাকা -১৯) আসনের সংসদ সদস্য ও দুর্যোগ ব্যবস্হাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের অনুসারী। সেলিম মন্ডল তার দ্বিতীয় স্ত্রী আয়েশা আক্তার বকুল হত্যা মামলার প্রধান আসামী। মামলাটির বিচার কাজ মানিকগঞ্জ জেলা জজ আদালতে চলমান। সব জানার পরেও তাকে জেলা আওয়ামী লীগে পদ দেওয়া হয়েছে। যুবলীগ থেকে বহিস্কৃত নেতাকে আওয়ামী লীগে পদ দিয়ে তাকে পুরস্কৃত করা হলো কি না জানতে চাইলে সাভার থানা যুবলীগের সভাপতি ফয়সাল আহমেদ বলেন, পুরস্কৃত করা হয়েছে কি না জানি না তবে সিদ্ধান্তটি সঠিক হয়নি।

সেলিম মন্ডলকে জেলা আওয়ামী লীগের পদ পাইয়ে দেওয়ার জন্য তদবির ছিল কি না জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্হাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের কে পদ পাবেন আর কে পাবেন না তা জেলা আওয়ামী লীগের বিষয়। আমি কি করে বলব। আমাকে সহ সভাপতির পদ দেওয়া হয়েছে, আমিই তো তা আগে থেকে জানতাম না।

সাবেক ঢাকা জেলা পরিষদের সদস্য ও সদ্য জেলা আওয়ামী লীগের পদ পাওয়া সেলিম মন্ডল পারিবারিক কলহের জেরে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী আয়েশা আক্তার বকুলকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে ইতালিতে পালিয়ে যাওয়ার সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। পরে তাকে মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হলে পুলিশ সেলিম মন্ডলকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরন করেন।

এর আগে নিহতের ভাই উজ্জ্বল হোসেন সেলিম মন্ডলকে প্রধান আসামি করে মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এসময় নিজের স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে যুবলীগ নেতা সেলিম মন্ডলকে দল থেকে থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। এছাড়াও সেলিম মন্ডলের ছোট ভাই জুয়েল মন্ডল একই মামলায় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়ে কারাবাস করেছেন।

জানা যায়, সেলিম মন্ডলকে পছন্দ করে বিয়ে করেন বিরুলিয়ার সামাইর গ্রামের মৃত সোহরাব হোসেনের মেয়ে আয়েশা আক্তার বকুল। এরপর থেকে স্বামীকে নিয়ে সাভার পৌর এলাকার মজিদপুর মহলায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন তারা।

আয়েশার বড় ভাই বশির হোসেন জানান, গত ২৮ জুলাই বোন আয়েশা এলাকার একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যায়। সেদিন সেলিম মন্ডল তার প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়। এ নিয়ে সেলিমের সঙ্গে আয়েশার কথা কাটাকাটি হয়। সেসময় তার স্বামী তাকে ব্যবস্থা করতেছি বলে হুমকি দেয়। এ ঘটনার চারদিন পর ২ আগস্ট থেকে আয়েশা নিখোঁজ হয় এবং ৩ আগস্ট সাভার উপজেলার পার্শ্ববর্তী সিঙ্গাইরের বায়ড়া ইউনিয়নের জামালপুর এলাকার রাস্তার পাশ থেকে সারা শরীর আগুনে পোড়া অবস্থায় তার মৃতদেহ উদ্ধার করে সিঙ্গাইর থানা পুলিশ।

পুলিশ জানায়, পারিবারিক কলহের জের ধরে গত ৩ আগস্ট সেলিম মন্ডল তার দ্বিতীয় স্ত্রী আয়েশা আক্তার বকুলকে (২৫) হত্যা করে মৃতদেহটি গুম করার জন্য মানিকগঞ্জের সিংগাইরে নিয়ে যায়। সেখানে বায়রা ইউনিয়নের স্বরূপপুর গ্রামে রাস্তার পাশে একটি কলাবাগানে নিহতের মৃতদেহটি ফেলে দেয়। এরপর তাকে যেন কেউ সনাক্ত করতে না পারে সেজন্য তার গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

প্রসঙ্গতঃ সেলিম ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে এলাকায় নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তাদের অত্যাচারে সাধারণ মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। বিরুলিয়ায় জোর পূর্বক জমি দখল, গার্মেন্টস এর ঝুট ব্যবসা দখলসহ সাভার ইউনিয়নের কলমা এলাকায় চাঁদার দাবিতে ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিকদের ওপর হামলাসহ সাধারন মানুষকে মারধরের একাধিক অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!