নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ভূমি জরিপ কাজে নিয়োজিত সাভার উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের সার্ভেয়ারদের বিরুদ্ধে ঘূষ বাণিজ্যের অভিযোগ এখন ওপেন সিক্রেট। চাহিদা মতো টাকা না দিলে মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে সেটেলমেন্ট অফিস পর্যন্ত কোন ধাপেই ঠিকমতো কাজ করেন না সার্ভেয়ারসহ অফিসটির কতিপয় দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী। টাকা দিতে না চাইলে যে কাজ কোন ভাবেই সম্ভব নয়, সেই কাজই টাকার বিনিময়ে করা পানির মতো সহজ। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে দুদকের ঢাকা-২ থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান পরিচালনা করেছে।
অভিযানকালে অভিযোগের সংশ্লিষ্ট এলাকা হেমায়েতপুর, চুনারচর, ভাকুর্তা ও মুশুরিখোলা মৌজায় বিআরএস জরিপ পরিচালনাকালে জমির মালিকদের নিকট হতে সার্ভেয়ার ও তাদের সহকারীদের মাধ্যমে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছেন দুদকের কর্মকর্তারা। এঘটনায় সার্ভেয়ারদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ যাচাই-বাচাইপূর্বক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারকে নির্দেশনা প্রদান করেন অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তারা।
দুদক কর্মকর্তারা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, তারা অভিযানের বিষয়ে সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার সুশান্ত কুমার রায়কে অবগত করে জানিয়েছেন, মাঠ পর্যায়ে জরিপকাজে সার্ভেয়ারদের কাজ তদারকির জন্য হল্কা অফিসার হিসেবে যাদের নিয়োগ করা হয়েছে, তারা হল্কা অফিসারগণ তাদের তদারকি সঠিকভাবে করছেন না মর্মে টিমের নিকট প্রতীয়মান হয়েছে। সার্ভেয়ারদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ যাচাই-বাচাইপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারকে নির্দেশনা প্রদান করেন অভিযান পরিচালনা কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে সাভার উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস ঘুরে দেখা গেছে, অফিসটির প্রতিটি আদালত ও এর আশপাশের এলাকায় নামধারী বিভিন্ন পত্রিকা, অনলাই টিভির সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা এবং সার্ভেয়ারদের আত্মিয় ও সহকারীসহ একাধিক গ্রুপ রয়েছে। যারা সাধারন মানুষের সাথে মিশে তাদের সমস্যার কথা শুনে এবং মোটা অঙ্কের টাকায় চুক্তি করে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে ভূমি জরিপের বিভিন্ন কাজ করে থাকেন। এদের মাধ্যমে কারও কারও জমির কাজ হলেও অনেক ভুক্তভোগী জমির মালিকের রয়েছে পাল্টা অভিযোগ।
ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি আদালতে বিচারকদের সাথে লিয়াজো করে কাজ করিয়ে দেয়ার মতো একাধিক দালাল চক্র রয়েছে। তারা সাধারন মানুষকে বিভিন্ন কথাবার্তা বলে খুব সহজে টাকার বিনিময়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর কাগজগুলো হাতে নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে গিয়ে কথা বলে এবং জমির মালিকের কাছ থেকে চুক্তিতে কাজ করে দেয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। সেই টাকা নিজেরা খেয়ে ফেলে ফাইল প্রসেসিংসহ বিভিন্ন কাজের কথা বলে জমির মালিকদের ঘুরাতে থাকে। অনেকেই দালাল চক্রের কাছে টাকা দিয়ে কাজ করাতে না পেরে নিজেরাই সরাসরি যোগাযোগ করে কাজ করেছেন বলে জানান।
অভিযোগ রয়েছে সাভার উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে নামধারী বিভিন্ন পত্রিকা, অনলাই টিভির সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতাদের দহরম মহরম সম্পর্ক রয়েছে। বিভিন্ন সময় এসব কর্মকর্তাদের সাথে দাড়িয়ে তাদেরকে দেদারছে ধুমপানা করাসহ বিভিন্ন কাজের বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে দেখা গেছে। তাদের সাথে দালাল চক্রের যাদের সম্পর্ক আছে এবং কর্মকর্তাদেরকে কমবেশি টাকা দেয় তাদের কাজ অনায়াসেই হয়ে যায়। তবে অনেক দালাল আবার নিজেরা টাকা খেয়ে শুধুমাত্র সম্পর্ক এবং চাপাবাজি করে কাজ করতে যায় সেগুলোই বিভিন্ন অজুহাতে আটকে যায়। তখন আটকে যাওয়া জমির মালিকদের আর যাওয়ার কোন পথ থাকেনা।
এদিকে ভূমি জরিপ কাজে ঘুষ গ্রহণে ঘটনায় ভুক্তভোগীদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার আলম নগর হাউজিং এ অবস্থিত সাভার উজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের কার্যালয়সহ ভাকুর্তা ইউনিয়নের চললাম ডিজিটাল জরিপের কার্যক্রমের মাঠে গিয়ে অভিযান পরিচালনা করেছে ঢাকা-২ থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট টিম। অভিযানকালে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এলাকা হেমায়েতপুর, চুনারচর, ভাকুর্তা ও মুশুরিখোলা মৌজায় বিআরএস জরিপ পরিচালনাকালে জমির মালিকদের নিকট হতে সার্ভেয়ার ও তাদের সহকারীদের মাধ্যমে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায় দুদকের কর্মকর্তারা। পরে এ বিষয়ে সাভার উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারের সাথে বিস্তারিত আলাপ করেন দুদক অফিসারগণ ।
জানতে চাইলে সাভার উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার সুশান্ত কুমার রায় দুদকের অভিযানের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, দুদক কর্মকর্তারা এসেছিলো, তবে কোন অভিযানে না, তারা এমনিতেই আসছিলো, খোঁজ খবর নিতে। দুদক কর্মকর্তারা কি বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছে, তা জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, আমি কিছু জানিনা এবং দুদক কর্মকর্তারাও আমাকে কিছু জানান নি। অফিসে আসেন, সেখানে বিস্তারি আলোচনা করবো, বলে তিনি এ বিষয় এড়িয়ে যান।