চাঁদার জন্য জাবি ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ২৪ লেগুনা আটকে রাখার অভিযোগ

অনলাইন ডেস্কঃ ‘পরিবারের সদস্য ৯ জন। কিস্তিতে গাড়ি কিনেছি, সপ্তাহে ৩ হাজার ৫০০ টাকার কিস্তি দেওয়া লাগে। আজ বৃহস্পতিবার কিস্তির তারিখ ছিল। পাশের বাসা থেকে ধার করে কিস্তি দিয়েছি। আগামী রোববার আরেকটা কিস্তি দেওয়া লাগবে। আমার এই গাড়ির ওপরই সংসার চলে। ঘরে চাউল নাই। দুই দিন ধরে গাড়িটা আটকানো। বউ–বাচ্চা বারবার ফোন দিচ্ছে। সকাল থেকে এসে বসে আছি গাড়ি ছাড়ছে না। আজ গাড়ি না ছাড়লে খাওন জুটবে না।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের পাশে রাখা ২৪টি লেগুনা। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় কথাগুলো বলছিলেন সাভার-আশুলিয়া রুটের লেগুনাচালক মোহাম্মদ সুমন। এর আগে বুধবার থেকে তাঁর গাড়িটি আটকে রেখেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন—বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল ফারুক, শাহ পরাণ ও হাসান মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, লেলিন মাহবুব এবং উপছাত্রবৃত্তিবিষয়ক সম্পাদক আল-রাজি সরকার প্রমুখ। তাঁরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।

শুধু সুমনের লেগুনা নয়, গত মঙ্গলবার রাত থেকে কয়েক দফায় আরও ২৩টি লেগুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের পাশে আটকে রেখেছেন ছাত্রলীগের নেতারা। তবে ছাত্রলীগ নেতারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা লেগুনাগুলো আটকেছেন।

অপর লেগুনাচালক খলিলুর রহমান বলেন, তাঁর স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। দুই দিন ধরে তাঁর ভাড়ায়চালিত গাড়িটি আটকানো। প্রতিদিন গাড়ি ভাড়াবাবদ ৮০০ টাকা মালিককে দেওয়া লাগে। ঘরে বাজার না থাকায় তাঁর স্ত্রী আজ বাসার পাশের দোকান থেকে বাকিতে বাজার এনেছেন। মাসের ১ তারিখে বাসা ভাড়া দেওয়া লাগবে। চিন্তায় সকাল থেকে না খেয়ে গাড়িটি ছাড়ানোর জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু কোনো সমাধান পাচ্ছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেলে ছাত্রলীগের নেতাদের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে লেগুনাগুলো আটকানো শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন লেগুনাগুলোর চাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে চলে যান। এরপর রাতে লেগুনা মালিক সমিতির নেতারা এলে কয়েকটি লেগুনা ছেড়ে দেওয়া হয়। আর বাকি ১১টি লেগুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে নিয়ে আটকে রাখা হয়। এরপর গতকাল বিকেলে আরও ১৩টি লেগুনা আটকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নিয়ে আসা হয়। আজ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের পাশে সারি সারি ২৪টি লেগুনা দাঁড়িয়ে। লেগুনাগুলোর পাশে অন্তত ১৩ জন চালক লেগুনা ফেরত পাওয়ার আশায় অপেক্ষা করছেন।

লেগুনাচালক ও মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাভার থেকে আশুলিয়া রুটে প্রায় দুই শতাধিক লেগুনা নিয়মিত চলাচল করে। সেগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাদের দিনপ্রতি ২৫ টাকা করে চাঁদা দিতে হতো। সে হিসাবে মাসে দেড় লাখ টাকা চাঁদা দিতো তাঁদের। তবে দুই মাস ধরে চাঁদা দেওয়া বন্ধ ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আবারও লেগুনা থেকে চাঁদা আদায়ের চুক্তি করতে চান ছাত্রলীগ নেতারা। এবার লেগুনাপ্রতি ১০০ টাকা দাবি করেছেন তাঁরা। তবে তা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে মালিকপক্ষ। তাই লেগুনা আটকে রাখা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে লেগুনা মালিক সমিতির আনারকলি গ্রুপের এক নেতা বলেন, প্রতি লেগুনা থেকে দিনপ্রতি ২৫ টাকা করে ছাত্রলীগের নেতাদের চাঁদা দেওয়া হতো। তবে এখন তাঁরা লেগুনাপ্রতি ১০০ টাকা দাবি করছে, যা দেওয়া সম্ভব নয়।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের নেতারা। তাঁরা বলছেন, সাভার থেকে আশুলিয়াগামী একটি লেগুনা সিঅ্যান্ডবি এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের (৪৬তম ব্যাচ) ও মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র তানভীর ও তারেকের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। তাই তিনটি লেগুনা আটকে রাখা হয়। তবে চালকেরা নকল চাবি দিয়ে সেগুলো নিয়ে চলে যান। এরপর ক্ষোভে শিক্ষার্থীরা লেগুনাগুলো আটকেছেন। মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলার জন্য ডাকা হলেও তাঁরা আসছেন না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘আমি শুনেছি ক্যাম্পাসের দুই শিক্ষার্থীকে লেগুনা ধাক্কা দিয়েছে। তাই ওই হলের শিক্ষার্থীরা লেগুনাগুলো আটকে রাখেছে। তাঁদের মালিকেরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে একটা সমাধান করা যেত। কিন্তু মালিকেরা যোগাযোগ করছেন না। গাড়িগুলো কার কাছে ফেরত দেব? সুত্রঃ প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!