গভীর নলকূপ যাচ্ছে ধনীদের বাড়ি, বঞ্চিত দরিদ্ররা, তথ্য দিতে নারাজ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী

ধামরাই প্রতিনিধি: অসহায় ও দরিদ্র পরিবারে নিরাপদ পানি সরবরাহের আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়ে স্থাপন করতে হয় সরকারের দেয়া গভীর নলকূপ। কিন্তু এই নিয়মের কোন তোয়াক্কা না করেই নলকূপ বরাদ্দের নামে হরিলুট চলছে ধামরাই উপজেলায়। টাকার বিনিময়ে নলকূপ দেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। আর এই সরকারি গভীর নলকূপ যাচ্ছে ধনাঢ্য ব্যক্তি, রাজনৈতিক দলের নেতা, ব্যবসায়ী, স্বচ্ছলদের বাড়িতে। স্বচ্ছল ব্যক্তি ও নেতাকর্মীদের নামে বরাদ্দ পাওয়া বেশির ভাগ নলকূপ বসানো হয়েছে তাদের নিজেদের ঘরে। তাদের ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহারযোগ্য স্থানে।

ধামরাই উপজেলায় ২০২২\২৩ অর্থ বছরে কত গুলো গভীর নলকূপ এসেছে এবং কাদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে এমন তথ্য জানতে চাইলে দেই দিচ্ছি বলে দুই সপ্তাহের বেশি এই প্রতিবেদক কে ঘুরায় উপজেলা জনস্বাস্থ্য সহকারী প্রকৌশলী মো: সামীউর রহমান। তথ্য দিচ্ছি বলে একদিন দুই ঘন্টা বসিয়েও রাখেন তিনি। পরে তথ্য অধিকার আইনে তথ্যের জন্য আবেদন করেও কোন তথ্য পাওয়া যায় না। স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের দোহাই দিয়ে তথ্য দিতে মানা করেন মো: সামীউর রহমান। পরে জাহাঙ্গীর আলম ও মোসা নামে দুই জন ঠিকাদারের মোবাইল নাম্বার চাইলেও তিনি দেন নি।

কি কারণে তিনি তথ্য ও ঠিকাদারদের ফোন নাম্বার দেননি? সঠিক তথ্যে হয়তো উঠে আসতে পারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী সামীউর রহমানের থলের বিড়াল।

জানা যায়, ২০২২/২৩ অর্থ বছরে ধামরাই উপজেলায় ৪৩৬ টি গভীর নলকূপ এসেছে। ধীরে ধীরে বিতরণও চলছে। প্রতিটি ইউনিয়নে ২৬ টি করে টিউবওয়েল পাওয়ার নিয়ম থাকলেও কম বেশি রয়েছে। কেন নিয়ম মেনে গভীর নলকূপ দেওয়া হয় না প্রশ্নে সামীউর রহমান বলেন, এগুলো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের কাজ, আমি কিছুই বলতে পারবো না।

সরেজমিনে জানা যায়, যে সকল ব্যক্তি নলকূপ পেয়েছেন তাদের মধ্যে দরিদ্র লোকের সংখ্যা নাই বললেই চলে। যাদের নামে নলকূপ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তাদের বাড়িতে ঠিকাদার নিজেই মালামাল নিয়ে নলকূপ বসিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও সেবা গ্রহিতা ব্যক্তি নিজ খরচে মালামাল নিয়ে যাচ্ছে। ষ্ট্রাকচার না করেই ঠিকাদাররা তাদের বিল উত্তোলন করে নিচ্ছে। আর এতে হাত রয়েছে জনস্বাস্থ্য সহকারী প্রকৌশলী সামীউর রহমান। ঠিকাদারদের সাথে হাত মিলিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।

জানা যায়, পূর্বের উপজেলা নির্বাহী অফিসার সামিউল হকের সময়ে ২০১৯ সালে প্রথমে ৩৮ টি গভীর নলকূপ আসলে তা পুরোপুরি সঠিকভাবে বিলিবন্টন করা হয়। এর পর পরই আরো ১২ টি গভীর নলকূপ আসে যার একটিও দরিদ্রদের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয় নি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সামিউল হক, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর সহকারী প্রকৌশলী মোঃ সামীউর রহমান ও রাজনৈতিক ব্যক্তির যোগসাজশে গোপনে অর্থের বিনিময়ে ধনী ব্যক্তিদের কব্জায় চলে গেছে এসব নলকূপ। এর মধ্যে ২০২০ সালে বন্যার ১০ টি নলকূপ আসে বন্যার্তদের নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য তা কি করেছে সেই তথ্য আজও অজানা।

ধামরাই উপজেলার জনস্বাস্থ্য সহকারী প্রকৌশলী মোঃ সামীউর রহমান ও নলকূপের পাইপ সরবরাহকারী ঠিকাদার বিপ্লবের সাথে আতাত করে টাকার বিনিময় গভীর নলকূপের উন্নত মানের পাইপের পরিবর্তে নিম্নমানের পাইপ দেওয়া হয়ে থাকে জনগণের মাঝে এবং বুয়েটে টেস্টের জন্য পাঠানো হয় উন্নত মানের পাইপ আর জনগণের মাঝে বিতরণ করা হয় নিম্নমানের পাইপ। বুয়েট থেকে পাইপ পরীক্ষা হয়ে আসার আগেই জনগণের মাঝে নিম্নমানের পাইপ বিতরণ করা হয় বলে জানা যায় ।

চৌহাট ইউনিয়নের বাকুলিয়া গ্রামের বশির উদ্দিনের বাড়িতে প্রায় ৬ মাস আগে বোরিং করলেও টিউবওয়েল বসানো হয় নি। শুধু তাই নয় কুল্লা, সদর, ভাড়ায়িয়া ও সোমভাগ ইউনিয়ন যতগুলো নলকূপ বসানো হয়েছে তার একটিরও ষ্ট্রাকচার করা হয় নি। অথচ ঠিকাদাররা সামীউর রহমানের সহায়তায় বিল উত্তোলন করে নিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, আমার নামে নলকূপ বরাদ্দ হওয়ার পরও আমাকে সামীউর রহমান চারবার ঘুরিয়েছেন। অবশেষে নিজ খরচে নলকূপ বাড়ি নিয়ে এসেছি। এখন নলকূপ কবে বসানো হবে তার কোন ঠিক নাই।

এ বিষয়ে ধামরাই উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী সামীউর রহমান বলেন, আমার যত জ্বালা। আমার তথ্য দিতে এমপি স্যারের নিষেধ আছে। তবে যে সকল বাড়িতে ষ্ট্রাকচার করা হয় নি তা অতিসত্বর করা হবে। কেন ঠিকাদার মালামাল নিয়ে যায় না এ বিষয়ে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেন নি এবং ঠিকাদারের নম্বর চাইলে তিনি অনিহা প্রকাশ করে বলেন, এটিও দিতে বারণ আছে। কিন্তু পাইপ সরবরাহকারী ঠিকাদার বিল্পবের সাথে রয়েছে সামীউর রহমানের যোগসূত্র। তিনি থাকলে সামীউর রহমানের কিছুই হবে না বলে জানা যায়।

নাম প্রকাশ না করে তিনি আরো বলেন, আমি কোন কথা বলতে চাইলেই উনারা বলেন, নির্বাচন আমরা করি, আপনার তো করতে হয় না। তাই কাছের লোকদের একটু সুযোগ দিতে হয়। কিন্তু গভীর নলকূপ বরাদ্দের তালিকা না দেয়ার মানে তিনি কি নলকূপ দূর্ণিতীর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

এবিষয়ে ঢাকা সার্কেলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: রওশন আলমকে ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!