সাভার প্রতিনিধিঃ ঢাকার সাভারে ঐতিহ্যবাহি সাভার মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ তৌহিদ হোসেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠানের বাহিরে থাকার পর আবারও নিজ পদে পুনর্বহাল হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে জোরপূর্বক অধ্যক্ষের পদে থাকা আলী হোসেনকে অপসারণের পর প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বৈধ অধ্যক্ষ মো. তৌহিদ হোসেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষ তৌহিদ হোসেনকে নিয়ে এসে তার চেয়ারে বসান।
এসময় দীর্ঘদিন পর প্রিয় অধ্যক্ষকে প্রতিষ্ঠানে ফিরে পেয়ে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান কলেজের শিক্ষক, কর্মচারী’সহ বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা।
এর আগে গত দুই দিন ধরে সাভার মডেল কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা ২১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিক্ষোভ শুরু করেন। “দেশপ্রেমের শপথ নিন, দুর্নীতিকে বিদায় দিন” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, লাঞ্ছিতকরণ, চাকুরীত্যাগে বাধ্য করার মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্টকারী আওয়ামী ছাত্র সন্ত্রাসী ও কলেজের লোভী, স্বার্থান্বেষী শিক্ষক আলী হোসেন, আওয়ামী সন্ত্রাসীদের কার্যক্রমের মদদদাতা হোসাইন মোহাম্মদ রানাকে পদত্যাগের জন্য বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। এছাড়া সমকামীতার অভিযোগে বরখাস্তকৃত রমজান আলীকে কলেজ থেকে আজীবন বহিষ্কারের দাবি জানান।
বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা জানায়, বিগত পনের বছরে সাভারের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাভার মডেল কলেজ আওয়ামী দোসরদের প্রতিহিংসা ও লোভের কারনে সেই সুনাম মুখ থুবড়ে পড়েছে। তাদের প্রত্যক্ষ মদদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতির নামে অপরাজনীতিসহ শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত করেছে। শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট দলের ট্যাগ দিয়ে নানানসময়ে নানান নির্যাতন করা হয়েছে। আমরা সকল বৈষম্য বাদ দিয়ে পুনরায় প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মান ফিরিয়ে আনতে প্রতিষ্ঠা অধ্যক্ষ মোঃ তৌহিদ হোসেনকে ফিরিয়ে এনেছি। আমরা আশা করছি খুব শিঘ্রই আমাদের কলেজটি আবারও তার আগের অবস্থানে চলে আসবে।
প্রতিষ্ঠানটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের জেষ্ঠ শিক্ষক মনসুর আলী বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠানটি দখলের পায়তারা করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল। তারা ২৬ বছর ধরে দায়িত্বরত তৌহিদ হোসেনকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়। সম্প্রতি গণঅভ্যুত্থানে সেই সরকারের পতনের পর গত দুইদিন ধরে শিক্ষার্থীদের অব্যাহত আন্দোলনের মুখে প্রতিষ্ঠানকে আওয়ামী লীগের দখল মুক্ত করে মো. তৌহিদ হোসেনকে আবারো অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে সাভার মডেল কলেজে পুনর্বহাল হওয়া অধ্যক্ষ মোঃ তৌহিদ হোসেন বলেন, গত ২৬ বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে ভাড়াকৃত ভবন থেকে সাভার মডেল কলেজকে নিজস্ব জমিসহ বহুতল ভবনে দাড় করিয়েছি। এখানকার প্রতিটা শিক্ষক নিজেদের লাভের কথা চিন্তা না করে একটি ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। যার ফলে সাভার মডেল কলেজ ঢাকা জেলার মধ্যে শ্রেষ্ট কলেজ হিসেবে স্থান করে নেয়। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমাকে জোরপূর্বকভাবে কলেজ থেকে অপসারন করা হয়। বর্তমানে শৈরাচারি সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীরা আবারও আমাকে প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়ে এসেছে। শিক্ষার্থীদের ইচ্ছায় আমি আমার অবস্থান ফিরে পেয়েছি, এজন্য আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীসহ শিক্ষক ও কর্মচারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী কলেজের ২৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী তানজির খান মুন্নার স্মরণে কলেজ লাইব্রেরীর নামকরণের ঘোষনা দিয়েছি এবং পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নিয়ে কলেজের উন্নয়নে কাজ করবো।
অধ্যক্ষ মো. তৌহিদ হোসেন আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে সর্বপ্রকার বৈষম্য দূর করতে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। এই কলেজকে আজ বৈষম্যমুক্ত করতে যারা আন্দোলন করেছেন সেই শিক্ষার্থীদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। ১৯৯৬ সালে মেধাবী ও আদর্শ মানুষ তৈরির স্বপ্ন নিয়ে সাভার মডেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গত কয়েক বছরের দখলদারিত্বের পর আজ এই প্রতিষ্ঠান বৈষম্যমুক্ত হলো। এখন থেকে আবারো এখানে শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ ফিরে আসবে।
ছাত্রদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন- রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মনসুর আলী, গণিত বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বিল্লাল হোসেন, জীববিজ্ঞান বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক নাজমুন নাহার, ব্যবস্থাপনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক রাশেদুল ইসলাম ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক মাসুম সাঈদ।