সাভারে তীব্র গ্যাস সংকটে দুর্ভোগে ২০ গ্রামের ১৫ হাজার পরিবার

বিশেষ প্রতিনিধিঃ সাভার উপজেলার তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের এক, দুই, ও চার নং ওয়ার্ডে গত ১০ দিন ধরে তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। এর ফলে এসব এলাকার অন্তত ২০টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজারেরও অধিক পরিবারের সদস্যরা খেয়ে না খেয়ে চরম দূর্ভোগে পড়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেও সংকট কাটছেনা। ফলে অনাহারে অর্ধাহারে এবং বাহিরের খাবার খেয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়ার কারনে ঠিক মতো কাজ করতে পারছেনা শ্রমজীবি নারী-পুরুষেরা।

সরেজমিনে তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের শোভাপুর, রাজ ফুলবাড়িয়া, কৃষ্ণনগর, ক্ষিদ্রগতি ও নগরচর গ্রাগ ঘুরে দেখা যায় কোন বাড়িতেই গ্যাস নেই, হাহাকার। গত ৯ জুলাই (রবিবার) রাত থেকে পুরো ওয়ার্ডজুড়ে দেখা দিয়েছে গ্যাসের সংকট। বাড়িঘর থেকে শুরু করে শিল্প-কারখানা, সিএনজি স্টেশন সর্বক্ষেত্রে গ্যাস সঙ্কটের কারনে দূর্ভোগে পড়েছে এখানকারা বাসিন্দারা।

তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিল মঙ্গলবার থেকে গ্যাসের সঙ্কট থাকবে না। কিন্তু অদ্যবধি গ্যাস না আসায় সে আশ^াসেও গুড়ে বালি। রাত ২ টার পর কোন এলাকায় সামান্য চুলা জ¦ললেও তা আধাঘন্টার বেশী দীর্ঘস্থায়ী হয়না। এ অবস্থায় অনেকেই কেরোসিন, কাঠের চুলা, রাইস কুকার ও ইনডাকশন ওভেনে রান্না করাসহ হোটেল থেকে খাবার কিনে এনে খাচ্ছেন।

অভিযোগ রয়েছে সাভারে বর্তমানে গ্যাসের বৈধ গ্রাহকের চেয়ে অবৈধ গ্রাহকের সংখ্যা কয়েকগুন। অবৈধ্য গ্যাস সংযোগগুলো বিভিন্ন শিল্প লাইনের উচ্চ চাপ বিশিষ্ট পাইপ থেকে সংযোগ দেয়ায় তাদের গ্যাস পেতে কোন সমস্যা হচ্ছেনা। অন্যদিকে বৈধ গ্রাহকেরা দীর্ঘদিন ধরে সরবরাহকৃত কম চাপ বিশিষ্ট গ্যাস ব্যবহার করেই অভ্যস্ত। কিন্তু বর্তমানে চাহিদার তুলনায় সরবরাহের পরিমান কম থাকায় এবং গ্যাসের সোর্স লাইন দুরে থাকার কারনেই তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রামের বৈধ গ্রাহকেরা ঠিকমতো গ্যাস পাচ্ছেনা। এর ফলে বাসা বাড়িতে ও খাবার হোটেলগুলোতে রান্নার জন্য কাঠের লাকড়ি, কেরোসিন ও বোতলজাত এলপি গ্যাস ব্যবহার হতে দেখা গেছে। টানা এক সপ্তাহেরও বেশী সময় ধরে গ্যাস সংঙ্কটের কারনে এসব গ্রামের আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ দেখা গেছে।

গত ১০ দিন ধরে তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের পানপাড়া, কৃষ্ণনগর মাঝিপাড়া, কুঠিবাড়ি, ভাওয়ালিয়া পাড়া, নয়াপাড়া, বর্ধনপাড়া, ৪ নং ওয়ার্ডের ভরারী, তেঁতুলঝোড়াসহ ২০টি গ্রামে গ্যাস সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। একই অবস্থা ও এলাকার বিভিন্ন শিল্প কারখানাসহ সিএনজি স্টেশনগুলোতেও। ঠিকমতো গ্যাস সরবরাহ না থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। দিনের বেলায় সিএনজি স্টেশনে গ্যাসের জন্য গাড়ির সিরিয়াল থাকলেও গ্যাস দেওয়া সম্ভব হয়না।

তেঁতুলঝোড়া এলাকায় অবস্থিত লালন সিএনজি স্টেশনের কর্মচারী মোঃ আজমল খান রিপন বলেন, গত ৬ দিন ধরে দিনের বেলায় কোন গাড়িতে গ্যাস দিতে পারছিনা। রাতের বেলায় একটু গ্যাস আসলেও প্রেসার না থাকায় বেশী গ্যাস ঢুকেনা। আমাদের বাসাবাড়ির অবস্থা আরও খারাপ। প্রথম দিন বাইরে থেকে এক হাজার টাকার খাবার কিনে এনে পোলাপান নিয়ে খেয়েছি। কিন্তু মাত্র ঈদ ভাঙ্গা মাস, হাতে তেমন টাকা পয়সাও নাই। বাহিরে থেকে খাবার কিনে খেতে হলেও টাকার দরকার। আমরা যে কি কষ্টের মধ্যে আছি তা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ যানেনা।

তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন ২ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জগদীশ চন্দ্র ধর তুলশী বলেন, আজ প্রায় ১০ দিন ধরে আমাদের ইউনিয়নের ৩ টি ওয়ার্ডের অন্তত ২০টি গ্রামে গ্যাস সংঙ্কট তীব্র আকার ধারন করেছে। যে কারনে এসব এলাকার প্রায় ১৫ হাজার পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে খেয়ে না খেয়ে অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে দিন পার করছে। আমি নিজে সাভার গ্যাস অফিসে যোগাযোগ করেছি, পরিচালক অপারেশন সেলিম মিয়ার সাথেও যোগাযোগ করেছি, কিন্তু তারা আমাদের কোন সমাধান দিতে পারছেনা।

শোভাপুর এলাকার গৃহিনী নাসিমা বেগম বলেন, দশ দিন ধরে আমাদের এলাকায় গ্যাস নাই, খুব কষ্টে আছি। প্রথম দিন হোটেল থেকে রুটি কিনে খাই। পরের দিন আমরা রান্না করতে না পারায় না খেয়ে ছিলাম। এখন অনেক কষ্ট করে লাকরি দিয়ে রান্না করে কোন মতে নিজেরা খাচ্ছি কিন্তু ভাড়াটিয়ারাতো রান্না করার সময় সুযোগ পাচ্ছেনা। তাই তারা বাসা ছেড়ে ভাড়া না দিয়েই অন্য এলাকায় চচ্ছে যাচ্ছে। গরিব মানুষ, আমরা অনেক কষ্ট করে একটা বাড়ি করেছি। কয়েকটা রুম ভাড়া দিয়েছি। এখন ভাড়াটিয়া চলে গেলে আমরা কিভাবে কি করবো?

অপর গৃহিনী শাহিদা বেগম বলেন, কতদিন ধরে গ্যাস নাই, রান্না করে খেতে পারছিনা। বাচ্ছাদের দুধ গরম করবো, সুজি গরম করবো তাও করতে পারছিনা। ছেলেটা গার্মেন্টসে চাকুরী করে ঠিকমতো খাওন দিতে পারছিনা। দুপুরে বাসায় খেতে আসছে কিন্তু রান্না করতে না পারায় না খেয়েই অফিসে চলে গেছে। আমরা ঠিকমতো বিল দেই, তাই সরকারের কাছে চাই দ্রুত আমাদের গ্যাস দেয়া হোক যাতে করে আমরা রান্না করে খেতে পারি।

জানতে চাইলে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের পরিচালক (অপারেশন) প্রকৌশলী মোঃ সেলিম মিয়া বলেন, বিভিন্ন স্থানেই গ্যাসের ক্রাইসিস দেখা দিয়েছে। আমরা কাজ করছি সমস্যা নিরসনের জন্য। এটা পত্রিকায় দেয়ার মতো কিছুনা। এখন আগের চেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ হারুনুর রশিদ মোল্লা বলেন, বর্তমানে গ্যাসের ক্রাইসিস চলছে, গ্যাস না থাকলেতো কিছু করার নাই। গ্যাস কম থাকলে আমি কিছু করতে পারবোনা। গ্যাসের প্রেসার বাড়লে এমনিতেই গ্যাস পাওয়া যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!