সাভার প্রতিনিধিঃ সৌদি আরবের দাম্মামের হুফুফ শহরের ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকার একটি ফার্নিচার কারখানায় আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া সাভারের সাইফুল ইসলামেরর লাশ ফিরে পেতে চান পরিবারের সদস্যরা। রবিবার সকালে নিহত সাইফুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় স্বজনদের আহাজারী।
উপজেলার বনগাঁও ইউনিয়নের বলিয়ারপুর সাতানিপাড়া বাসষ্ট্যান্ডর এলাকার মৃত আলাউদ্দিনের ছেলে মোঃ সাইফুল ইসলাম (৪৫)। স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে বার বার শোকে মুর্ছা যাচ্ছেন নিহতের স্ত্রী নাসিমা আক্তার। একমাত্র মেয়ে সাইকা বার বার কান্না করছিলো আমিও বাবার কাছে চলে যাবো। ও বাবা তুমি কোথায় গেলে, আমাকেও তোমার সাথে নিয়ে যাও। পরিবারের লোকজন ছাড়াও পাড়া প্রতিবেশী, গ্রামবাসী ও আত্মীয় স্বজনদের কান্না যেন থামছেইনা। সাইফুলের মৃত্যুর শোকে স্বজনদের কান্নায় সেখানকার আকাশ-বাতাস ভাড়ি হয়ে উঠেছে।
চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সাইফুল ইসলাম সবার বড় ছিলেন। সংসারের দায়িত্ব কাঁেধ নিয়ে তিনি প্রথমে দেশে গাড়ি চালাতেন। তারপর প্রায় এক যুগ আগে পারি জমান সৌদি আরবে। আটবছর প্রবাস জীবন পারি দিয়ে সাইফুল দেশে ফিরে আসেন। তিন বছর তিনি বাংলাদেশে থাকাকালীনও গাড়ি চালাতেন। একমাত্র মেয়েকে খুব ভালোবাসতেন সাইফুল। তাই মেয়েকে দ্বীনি শিক্ষার জন্য মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছিলেন। মেয়ে সায়েকা কোন্ডা নুরুল কোরআন ইসলামিয়া মাদ্রাসার ৫ম শ্রেনীতে পড়ে।
নিহত সাইফুলের মা নবিজা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলেডা আগুনে পুড়ে মারা গেল, এখন কে আমাদেরকে দেখবে। আর কখনও সাইফুল আমাকে মা বলে ডাকবেনা। আমি শেষবারের মতো ছেলেকে দেখতে চাই। তাই সরকারের কাছে আমার ছেলের লাশটা দেশে আনার ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানাই। আমি যেন ছেলের লাশটা পাই।
নিহত সাইফুলের স্ত্রী নাছিমা আক্তার স্বামী হারানোর শোকে পাগলপ্রায়। কিছুক্ষণ পর পর তার কোলে থাকা একমাত্র মেয়ে নুসরাত জাহান সাইকা চিৎকার করে করে বাবা বাবা করে কান্না করছে। নাছিমা বলেন, আমার স্বামী পরিবারের হাল ধরতে বিদেশে গেছে। সেখানে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ায় এখন আমাদেরকে কে দেখবে। আমরা কি করে চলব। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ আমার স্বামীর লাশ যেন দ্রæত দেশে আনার ব্যাবস্থা করেন।
নিহত সাইফুল ইসলামের চাচাতো ভাই রিয়াদ জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত ২ টার দিকে আমরা জানতে পারি আমার চাচাতো ভাই সৌদি আরবে আগুনে পুড়ে মারা গেছে। মাত্র ১৪ মাস আগে ২য় বারের মতো তিনি সৌদি আরবেন যান। সেখানে একটি কোম্পানীতে গাড়ি চালাতেন। শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় সে অন্যান্য শ্রমিকদের সাথে কারখানার ভিতরে ঘুমিয়ে ছিলেন। তাদের সাথে থাকা কয়েকজন শ্রমিক বাহিরে যাওয়ার সময় তালা দিয়ে চলে যায়। যে কারনে আগুন লাগার সময় আমার চাচাতো ভাইসহ অন্যরা বের হতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, সাইফুল ভাই একমাত্র মেয়ে সায়েকাকে অনেক ভালোবাসতেন। তার জন্য তিন বছর বাংলাদেশে ছিলেন। সায়েকা এখন মাদ্রাসায় ৫ম শ্রেনীতে পড়েন। বাবার মৃত্যুর খবরে সে অনবরত কেঁদে চলেছে আর বলছে ও বাবা তুমি কোথায়? আমাকেও তোমার কাছে নিয়ে যাও। তার কান্না দেখে পরিবারের অন্যদের কান্নাও থামছেনা। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনার পর কাঁদতে কাঁদতে ভাবীও অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে।
সাইফুলের চাচা আমজাদ হোসেন জানান, সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে এবং একমাত্র মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ৩য় বারের মতো সৌদিতে যায় সাইফুল। সেখানে ট্রাক চালাতো, গতকাল আমরা খবর পাই সে আগুনে পুড়ে মারা গেছে। আমরা শুধু তার লাশটা চাই, আর কিছু চাই না। যে আমার ভাতিজাকে বিদেশ পাঠিয়েছে তার সঙ্গে যোগাযোগ করছি লাশ আনার জন্য। আমরা মন্ত্রণালয়েও যোগাযোগ করব।