এসআই নোমান ও এএসআই বদরুলের বিরুদ্ধে মারধর, নির্যাতন করে টাকা আদায়ের অভিযোগ

সাভার প্রতিনিধিঃ সাভারের আশুলিয়ায় মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে মারধর, নির্যাতন ও আটকে রেখে মুক্তিপন আদায়ের অভিযোগ উঠেছে আশুলিয়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নোমান সিদ্দিকী ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) বদরুল হুদার বিরুদ্ধে। এছাড়া টাকা দিতে না পারলে আটক ব্যক্তিদের মেয়ে নিয়ে ঘুরাসহ কুপ্রস্তাব দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে এই দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সাথে কথা বলে পৃথক তিনটি ঘটনায় ৩ জনকে নির্যাতন, মারধরসহ আটকে রেখে মুক্তিপন আদায়ের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গত ১১ জুলাই বিকেলে আশুলিয়ার কাঠগড়া পশ্চিমপাড়া এলাকার বাসার সাসমনে থেকে নাজমুল হোসেন মোল্লাকে প্রাইভেটকারে তুলে নেয় এসআই নোমান সিদ্দিকী ও এএসআই বদরুল হুদাসহ তিনজন।

ভুক্তভোগী নাজমুল হোসেন মোল্লা বলেন, আমি বিকেলে ভাড়া বাড়ির পাশে মাচায় বসে নির্মাণ শ্রমিকদের বিল প্রদানের জন্য পকেটে ২৪ হাজার টাকা নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম। এসময় হঠাৎ আশুলিয়া থানার এসআই নোমান সিদ্দিকী ও এএসআই বদরুল হুদাসহ তিনজন এসে আমাকে প্রাইভেটকারে তুলে নেয়। গাড়িতে তুলে আমার পকেটে থাকা ২৪ হাজার টাকা নিয়ে যায় তারা। পরবর্তীতে আরও টাকা আনার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। টাকা আনতে সময় লাগায় পায়ের তালুতে পেটানোসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতন শুরু করে। টাকা না দিলে এসময় তারা মাদক দিয়ে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেয়। প্রায় ৪/৫ ঘণ্টা নির্যাতনের পর বাধ্য হয়ে আমার শ্যালকের মাধ্যমে আরও ৫০ হাজার টাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেইটে আনিয়ে দিয়ে তাদের কাছ থেকে ছাড়া পাই। টাকা নেওয়ার পর ঘটনা কাউকে জানালে আবারও মাদক দিয়ে মামলা দেওয়ার ভয় দেখায় তারা।

নাজমুল হোসেনের ভাই আসাদ বলেন, আমার ভাইকে এসআই নোমান ও এএসআই বদরুল নির্যাতন করে ৭৪ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। তবে ১৫ জুলায় আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (অপারেশন) জামাল শিকদার আমাকে থানায় ডেকে নেন। সেখানে তার সামনে এসআই নোমান সিদ্দিকী ও এএসআই বদরুল হুদা ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছে। তাই আপনাদের কিছু করার দরকার নেই।

ভাদাইল এলাকার সুইপার আরিফ খান বলেন, গত ২৮ মে আমি ভাড়া বাসার নিচে দোকানে দাঁড়িয়ে আইপিএল এর ফাইনাল খেলা দেখছিলাম। এসময় হঠাৎ করে পিছন দিয়ে এসে এএসআই বদরুল হুদা ও তাদের সোর্স রোমান আমাকে ঝাপটে ধরে হ্যান্ডকাফ পরায়। পরে আমাকে ঘরে নিয়ে গিয়ে তল্লাশি করে ১০০ গ্রাম গাঁজা পায়। আমি সুইপার মানুষ, একটু গাঁজা খাই। এজন্য আমাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে প্রথমে আমার ১০ বছরের বাচ্চা মেয়ের সামনে আমাকে নির্যাতন শুরু করে। এসময় আমার ঘরে তালা দেওয়া থাকায় হাতুরি দিয়ে তালা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে সেখানেই প্রায় ১ ঘণ্টা নির্যাতন করে। পরে বিছানার নিচে রাখা ৩২ হাজার টাকা নিয়ে পকেটে ঢুকায় বদরুল। আমার ওপর নির্যাতন করলে আমার বাচ্চা মেয়েটা কান্নাকাটি করে। তখন এসআই নোমান সিদ্দিকী মেয়েকে বলে চিৎকার চেচামেচি করলে তোমার আব্বুকে চালান করে দেব। চুপ করে থাকলে ছেড়ে দেব।

তিনি আরও বলের, আমার বড় মেয়ে বাসায় এলে তাকে ১ লাখ টাকা সংগ্রহ করে দিতে বলে এসআই নোমান সিদ্দিকী। মেয়ে টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এএসআই বদরুল। বদরুল বলে, আমার মেয়েকে সারারাত গাড়িতে করে নিয়ে ঘুরে বেড়াবে। আমার মেয়েকে তাদের হাতে তুলে দিলে একটি টাকাও লাগবে না। আমাকে ভাদাইলের কিং বানিয়ে দেবে। এসময় তিনি আমার মেয়েকেও কুপ্রস্তাব দেন। একপর্যায়ে বাসা থেকে আমাকে প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে কাশিমপুরের সারদাগঞ্জের কুয়েরি টেক্সটাইলের পাশে নিয়ে যায়। আমি তাদেরকে বলেছি আমার কাছে ১০০ গ্রাম গাঁজা পেয়েছেন, আমি অপরাধী, আমাকে চালান করে দেন। কিন্তু তারা আদালতে না পাঠিয়ে টাকা দাবি করেন।

আমি সুইপার আর আমার স্ত্রী মানুষের বাসায় কাজ করে। আমরা টাকা কোথায় পাবো তাদের এভাবে বললে আমার ফোন দিয়ে আমার মেয়েকে লাইনে রেখে আমার ওপর নির্যাতন চালায়। তারা প্ল্যায়ার্স দিয়ে আমার নখে চাপ দিয়ে নির্যাতন করলে আমি চিৎকার করি। নিরুপায় হয়ে আমার বড় মেয়ে করোনার সময় স্কুল বন্ধ অবস্থায় চাকরি করে জমানো টাকা দিতে রাজি হয়। পরে স্থানীয় জয় ফোন ফ্যাক্সের দোকানে ৫০ হাজার টাকা আনায়। সেই টাকা তুলে এসআই নোমান ও এএসআই বদরুলকে দিলে আমাকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু আমি এখনও আতঙ্কে রয়েছি।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত এএসআই বদরুল বলেন, এসব বিষয় আমি জানি না। আপনি নোমান স্যারের সাথে কথা বলেন।

অপর ভুক্তভোগী আলমগীর হোসেন বলেন, গত ৪ ফেব্রুয়ারি আমাকে ফোন করে থানায় দেখা করতে বলেন এসআই নোমান সিদ্দিকী। কিন্তু আমি দেখা না করায় পরবর্তীতে আমাকে চার্জশিটে নাম ঢুকিয়ে চালান দেওয়ার হুমকি দিয়ে ১ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে অনেক কষ্টে তাকে ৩০ হাজার টাকা জোগার করে দিলেও আমাকে নানাভাবে হয়রানি করে যাচ্ছে। তিনি আমার কাছে কাজ চান। আমি তো সোর্স না যে তাকে কাজ দিতে পারবো। ঈদের আগেও আমার সঙ্গে দেখা হলে এসআই নোমান বলেন, ঈদ ভেতরে করবেন নাকি বাইরে। আমি বলেছি আমি বাইরে করব, জেলখানার ভেতরে ঈদ করবো কেন। তিনি বলেন, আপনাকে কেরানীগঞ্জ রেখে আসব যদি কাজ না দেন। এভাবেই এখনও হুমকি প্রদানসহ বিভিন্নভাবে বিরক্ত করছেন তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নোমান সিদ্দিকী বলেন, ভাদাইলের আলমগীরকে মামলা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, ভয়ভীতি দেখিয়েছি। কিন্তু টাকা নেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা। আগামীকাল আরিফ খানকে খুঁজে বের করে বিষয়টি জানতে চাইবো। এছাড়া অন্য দুটি ঘটনায় তিনি জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেছেন। তবে নাজমুল হোসেন মোল্লার বিষয়ে এক এএসআই ফোন করেছিল বলে তিনি স্বীকার করেছেন।

অভিযুক্তদের বিষয়ে জানতে চাইলে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোমেনুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি শুনলাম। এবিষয়ে তাদের কাছে আমি তাদের ডেকে বিষয়টি শুনছি।

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান (পিপিএম) বলেন, এসব বিষয়ে কেউ আমার কাছে কোন অভিযোগ করেনি। আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানলাম। যদি ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায় তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!