বিশ্ব আয়োডিন দিবস-২০২৩ এর উপর আলোচনা অনুষ্ঠান

প্রেস বিজ্ঞপ্তিঃ আয়োডিন অভাবজনিত সমস্যা একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা। এ সমস্যা নিরসণকল্পে এবং জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২১ অক্টোবর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশ্ব আয়োডিন দিবস উদযাপিত হয়। বাংলাদেশে এই প্রথম স্বল্প পরিসরে ২১ অক্টোবর বিশ্ব আয়োডিন দিবস উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এরই অংশ হিসেবে ২১ অক্টোবর (শনিবার) বিসিক ভবন, তেজগাঁও, ঢাকায় ‘বিশ্ব আয়োডিন দিবস-২০২৩’ এর উপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিসিক চেয়ারম্যান মুহঃ মাহবুবর রহমান (গ্রেড-১)। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মোঃ নূরুজ্জামান এনডিসি, বিসিকের পরিচালক (অর্থ) মোঃ কামাল উদ্দিন বিশ্বাস, পরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) মোঃ আহসান কবীর, পরিচালক (শিল্প উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ) মোহাম্মদ জাকির হোসেন, পরিচালক (প্রশাসন) শ্যামলী নবী, পরিচালক (দক্ষতা ও প্রযুক্তি) কাজী মাহাবুবুর রশিদ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের (এনআই) কান্ট্রি ডিরেক্টর সায়কা সিরাজ, গেইনের পোর্টফোলিও লিড ড. আশেক মাহফুজ, বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল করির। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম, পরিচালক, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গুলজারুল আজিজ, খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ আলোচনা অনুষ্ঠানে বিজ্ঞ আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ, লবণ মিল মালিক, সাধারণ ভোক্তা, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রায় ২০০ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বিসিকের লবণ সেল কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে সার্বিক সহায়তা প্রদান করেছে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল (এন আই) ।

আয়োডিন একটি অত্যাবশ্যকীয় অনুপুষ্টি। আয়োডিন মানুষের স্বাভাবিক, মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। দেশে অনুপুষ্টির অভাবজনিত সমস্যাগুলোর মধ্যে আয়োডিন ঘাটতিজনিত সমস্যা অন্যতম। আয়োডিনের অভাবে গলগণ্ড, হাবাগোবা, বামনত্ব, অকাল গর্ভপাত, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধিত্বসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। ৯০ দশকের পূর্বে বাংলাদেশে আয়োডিন ঘাটতিজনিত সমস্যাসমূহ প্রকট আকার ধারণ করেছিল। দেশের বেশকিছু স্থানে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলতে আয়োডিন ঘাটতিজনিত সমস্যা ব্যাপক আকারে দেখা দেয়। সে সময় পথেঘাটে গলগণ্ড রোগী দেখা যেত। এসকল সমস্যা থেকে উত্তোরণের লক্ষ্যে সরকার একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

পদক্ষেপের অংশ হিসেবেই ৯০ দশক হতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কোর্পোরেশন (বিসিক) আয়োডিন ঘাটতিজনিত সমস্যা নিরসনকল্পে সর্বজনীন আয়োডিনযুক্ত লবণ উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কার্যক্রমের অংশ হিসেবে লবণ মিলের নিবন্ধন প্রদান, মিলসমূহকে পটাশিয়াম আয়োডেট সরবরাহ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান, লবণমিল ও বাজার পর্যায়ে মনিটরিং এবং আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করা হয়। এ কার্যক্রমের ফলে বর্তমানে ৭৬% পরিবার আয়োডিনযুক্ত প্যাকেট লবণ ব্যবহার করছে। ফলশ্রুতিতে বর্তমানে দৃশ্যমান গলগণ্ড এবং বামনত্ব দেশ থেকে সমূলে নির্মূল হয়েছে। জাতীয় পুষ্টি জরিপ ১৯৯৩ অনুযায়ী ৮.৮% মানুষের মাঝে দৃশ্যমান গলগণ্ড এবং ০.৬% মানুষের মাঝে বামনত্ব ছিল। দীর্ঘ তিন দশকের পরিশ্রমের ফলে দেশ দৃশ্যমান গলগণ্ড এবং বামনত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়েছে। দেশে আয়োডিনযুক্ত লবণ উতপাদন কার্যক্রম শুরুর দিকে অর্থাৎ ১৯৯৩ সালে আয়োডিনের অভাবজনিত সমস্যার হার ছিল ৬৮.৯০%।

বিসিকের এ কার্যক্রমের ফলে ২০১৯-২০ পর্যন্ত আয়োডিনের অভাবজনিত সমস্যার হার কমে দাড়িয়েছে ২৪.৬%। কোনো দেশের ৯০%মানুষ আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার করলে সে দেশ আন্তর্জাতিকভাবে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। সে স্বীকৃতি পেতে আমাদের আর বেশি দেরি নেই। আর মাত্র ১৪% মানুষকে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারের আওতায় নিয়ে আসতে পারলেই আমরাও সে স্বীকৃতি অর্জন করবো। সে উদ্দেশ্যেই এই আলোচনা সভা। দেশের মানুষকে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারের আওতায় নিয়ে আসতে সচেতনতা আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!