সাভার প্রতিনিধিঃ সাভারের শীর্ষ মাদক কারবারি ও সিরিয়াল কিলার স্বপনের বাড়ির মেঝে খুড়ে নিখোঁজ যুবক তোফাজ্জল হোসেন টোনোর (২৮) মাথার খুলি, হাত ও পায়ের হাড়গোড় উদ্ধার করেছে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মঙ্গলবার বিকেলে সাভার পৌরসভার আনন্দপুর সিটিলেন মহল্লার মাদক সম্রাট স্বপনের নির্মানাধীন দোতলা বাড়ির নিচতলার একটি কক্ষের মেঝে খুড়ে নিহতের শরীরের বিভিন্ন অংশ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে পাশর্^বর্তী ধামরাই উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে মাদক স¤্রাট স্বপনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। এসময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশী পিস্তল এবং বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য হিরোইন উদ্ধার করা হয়েছে। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই নিখোঁজ তোফাজ্জল হোসেন টোনোর দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়।
নিহত তোফাজ্জল হোসেন টোনো (২৮) সাভার পৌরসভার ইমান্দিপুর মহল্লার ছেলামত মিয়ার ছেলে। সে পাশর্^বর্তী রাজাশন এলাকার জিকা গার্মেন্টসে চাকুরী করতো। তার দেড় বছলের একটি সন্তার রয়েছে। অন্যদিকে মাদক কারবারি স্বপন সাভার পৌরসভার ইমান্দিপুরের শাহজাহানের ছেলে। তার সাভারের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি বাড়ি ও ফ্ল্যাট রয়েছে। সে সাভারে চিহ্নিত মাদক সম্রাট ও সিরিয়াল কিলার হিসেবে পরিচিত।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান জানান, গত ২ জুন সাভারে বিরুলিয়া খনিজ নগর এলাকা থকে সীমা আক্তার নামে এক নারীকে তুলে নিয়ে যায় কয়েকজন দুর্বৃত্ত। এঘটনায় ৬ জুন অপহরনকারী সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি। পরে তার দেয়া স্বীকারোক্তিতে জানা যায় সীমা আক্তারকে অপহরন করে হত্যা করে মাদক স¤্রাট স্বপনের বাড়ির পাশে লাশটি মাটিচাপা দেয়া হয়েছে। ঘটনার মূল হোতা স্বপনের নেতৃত্বে সাইফুল, রেজাউল, তাইরান ও আসিফ সীমাকে অপহরণ করে বর্বরভাবে ভাবে পানিতে চুবিয়ে অজ্ঞান করে মাটিতে পুতে রাখে।
পরবর্তীতে উক্ত মামলার সূত্র ধরে ডিবির কাছে তদন্তানাধীন আরও একটি অপহরণ মামলার তথ্য পাওয়া যায়। ওই তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির একটি দল অপহৃত তোফাজ্জল হোসেন টোনুর লাশ উদ্ধারের কার্যক্রম শুরু করে এবং আরো একটি দল সীমা হত্যার মূল হোতা সিরিয়াল কিলার স্বপনকে গ্রেপ্তারে অভিযানে নামে। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সকালে স্বপনকে গ্রেপ্তার করে তার দেখানো মতে তার মাদক স্পট থেকে তোফাজ্জল হোসেন টোনুর লাশের কয়েক টুকরা হাড় এবং খুলি উদ্ধার করতে করা হয়েছে। এছাড়া তনু অপহরণের সময় যে শার্টটি পরিহিত ছিলো সেটিও পাওয়া যায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বপন জানায়, তোফাজ্জল হোসেন টোনুকে নৃশংসভাবে কম্বল দিয়ে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মাটি চাপা দেয় সিরিয়াল কিলার স্বপন। এঘটনায় তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আরও গুরুত্বপূর্ন তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
সরেজমিনে আনন্দপুর সিটিলেন মহল্লার স্বপনের দ্বিতল বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির প্রবেশ পথ বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। বাহিরে উৎসুক জনতা ভীড় করলেও ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ভিতরে বাড়িটির নীচতলার একটি কক্ষের ঢালাই ভেঙ্গে প্রায় ৮ ফুট মাটি খুড়ে নিহতের লাশের হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়। বাড়িটির দোতলার বিভিন্ন কক্ষে ইয়াবা সেবনের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
নিহতের চাচা বরকত মিয়া বলেন, আমার ভাতিজা টোনোকে স্বপন হত্যা করে পুতে রেখেছিল। হাড়গোড়ের পাশ থেকে আমাদের টোনোর জামাকাপড় উদ্ধার করেছে পুলিশ। আমরা নিশ্চিত হয়েই বলছি এসব কাপড় আমার ভাতিজার।
ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে দ্বিতিয় দিনের অভিযানে মঙ্গলবার বিকেল ৫ টার দিকে লাশের মাথার খুলি ও হাড়গোড় পাওয়া যায়। নিহতের স্বজনেরা তার জামা কাপড় দেখে লাশটি টোনোর বলে নিশ্চিত করেছে।
প্রসঙ্গত, ১৪ মাস আগে নিখোঁজ হওয়া তোফাজ্জল হোসেন ওরফে টোনো। গত বছরের ২১ এপ্রিল তারিখে নিখোঁজের বাবা সেলামত মিয়া বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এর আগে গত বছরের ১৯ এপ্রিল বাসার পাশ থেকে নিখোঁজ হয় তোফাজ্জল তোফাজ্জল হোসেন টোনো।