সৌদি আরবে অগ্নিকান্ডে নিহত সাইফুলের স্বজনদের কান্না যেন থামছেইনা

সাভার প্রতিনিধিঃ সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দাম্মামের হুফুফ শহরের ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকার একটি ফার্নিচার কারখানায় লাগা আগুনে ৯ বাংলাদেশী মারা গেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন ঢাকার সাভার উপজেলার বনগাঁও ইউনিয়নের বলিয়ারপুর সাতানিপাড়া বাসষ্ট্যান্ডর এলাকার মৃত আলাউদ্দিনের ছেলে মোঃ সাইফুল ইসলাম (৪৫)। শুক্রবার সন্ধ্যায় আল-হফুফ শহরের বাণিজ্যিক এলাকায় ফার্নিচার ওয়ার্কশপে এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।

সরেজমিনে শনিবার বিকেলে নিহত সাইফুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় স্বজনদের আহাজারী। স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে বার বার শোকে মুর্ছা যাচ্ছেন নিহতের স্ত্রী নাসিমা আক্তার। একমাত্র মেয়ে সায়েকা বার বার কান্না করছিলো আমিও বাবার কাছে চলে যাবো। ও বাবা তুমি কোথায় গেলে, আমাকেও তোমার সাথে নিয়ে যাও। পরিবারের লোকজন ছাড়াও পাড়া প্রতিবেশী, গ্রামবাসী ও আত্মীয় স্বজনদের কান্না যেন থামছেইনা। সাইফুলের মৃত্যুর শোকে স্বজনদের কান্নায় সেখানকার আকাশ-বাতাস ভাড়ি হয়ে উঠেছে।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বলিয়ারপুর বাসষ্ট্যান্ডর থেকে পূর্বদিকে বনগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের দিকে মাত্র ২০০ গজ পড়েই মৃত আলাউদ্দিনের তিন তলা বাড়ি। বাড়িটির ২য় তলায় নিহত সাইফুল পরিবার নিয়ে বসবাস করতো। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সাইফুল ইসলাম সবার বড় ছিলেন। সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে তিনি প্রথমে দেশে গাড়ি চালাতেন। তারপর প্রায় এক যুগ আগে পারি জমান সৌদি আরবে। আটবছর প্রবাস জীবন পারি দিয়ে সাইফুল দেশে ফিরে আসেন। তিন বছর তিনি বাংলাদেশে থাকাকালীনও গাড়ি চালাতেন। একমাত্র মেয়েকে খুব ভালোবাসতেন সাইফুল। তাই মেয়েকে দ্বীনি শিক্ষার জন্য মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছিলেন। মেয়ে সায়েকা কোন্ডা নুরুল কোরআন ইসলামিয়া মাদ্রাসার ৫ম শ্রেনীতে পড়ে।

নিহত সাইফুল ইসলামের চাচাতো ভাই রিয়াদ জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত ২ টার দিকে আমরা জানতে পারি আমার চাচাতো ভাই সৌদি আরবে আগুনে পুড়ে মারা গেছে। মাত্র ১৪ মাস আগে ২য় বারের মতো তিনি সৌদি আরবেন যান। সেখানে একটি কোম্পানীতে গাড়ি চালাতেন। শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় সে অন্যান্য শ্রমিকদের সাথে কারখানার ভিতরে ঘুমিয়ে ছিলেন। তাদের সাথে থাকা কয়েকজন শ্রমিক বাহিরে যাওয়ার সময় তালা দিয়ে চলে যায়। যে কারনে আগুন লাগার সময় আমার চাচাতো ভাইসহ অন্যরা বের হতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, সাইফুল ভাই একমাত্র মেয়ে সায়েকাকে অনেক ভালোবাসতেন। তার জন্য তিন বছর বাংলাদেশে ছিলেন। সায়েকা এখন মাদ্রাসায় ৫ম শ্রেনীতে পড়েন। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে সে অনবরত কেঁদে চলেছে আর বলছে ও বাবা তুমি কোথায়? আমাকেও তোমার কাছে নিয়ে যাও। তার কান্না দেখে পরিবারের অন্যদের কান্নাও থামছেনা। গতরাতে ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনার পর থেকে কাঁদতে কাঁদতে ভাবীও অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। লাশ এখন ময়না তদন্তের জন্য সেখানকার মর্গে রয়েছে বলে আমাদেরকে জানানো হয়েছে। ভাইয়ের লাশ দেশে কবে আসবে সে বিষয়ে এখনও কিছু জানতে পারেননি তিনি।

সাইফুলের স্বজনরা জানান, সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে এবং একমাত্র মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ২য় বারের মতো সৌদিতে যায় সাইফুল। কিন্তু এই যাওয়াই যে তার শেষ যাওয়া হবে কে জানতো। এখন ছোট্ট সায়েকার কি হবে, কাকে বাবা বলে ডাকবে? বাবাও আর তাকে মা বলে বুকে জড়িয়ে ধরবেনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!